ঢাকা ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআনের গল্প

আবদুল্লাহ সরদার
কোরআনের গল্প

সামুদ গোত্র; হেজাজ ও তাবুতের মাঝামাঝি ছিল যাদের বাস। পূর্বপুরুষের ধর্ম অনুযায়ী মূর্তি পূজাতেই লিপ্ত ছিল তারা। আল্লাহতায়ালা তাদের কাছে পাঠালেন সালেহ (আ.)-কে। যেন মূর্তি পূজা থেকে ফিরে আসে তারা। উচ্চারণ করে তাওহিদের অমীয় বাণী। সালেহ (আ.) দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করলেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গেলেন। কোমলকণ্ঠে মূর্তিগুলোর অসারতা বোঝানোর চেষ্টা করলেন। মহান স্রষ্টা আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোশেশ করলেন। তবু সামুদ জাতির হৃদয় গলল না। অসার ধর্মে ইস্পাত কঠিন হয়ে রইল তারা। সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যান করল তার দাওয়াত।

একদিন সালেহ (আ.) তাদের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তারা দাঁড়িয়ে ছিল বিশাল এক পাথরের পাশে। একপর্যায়ে সামুদ গোত্র যেন আশ্বাস বাণী উচ্চারণ করল। বলল, ‘তুমি তো আল্লাহর নবী। এ পাথরের মাঝ থেকে দশ মাসের গর্ভবতী উটনী বের করে দেখাও দেখি! যদি পারো, তবেই ঈমান আনব আমরা।’ সালেহ (আ.) নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন রবের দরবারে। হৃদয়ের অর্ঘ্য ঢেলে দোয়া করলেন। এই তো মোক্ষম সুযোগ তাদের হেদায়েতের পথে আনার। হঠাৎ বিকট আওয়াজ হলো। পাথরের সেই বিশাল খণ্ড থেকে বেরিয়ে এলো একটি উটনী। দশ মাসের গর্ভবতী। আনন্দে ঝলমল করে উঠল সালেহ (আ.)-এর মুখ। আল্লাহর শোকর আদায় করলেন তিনি।

পরক্ষণে দেখা দিলো কালো মেঘের ঘনঘটা। ঈমান আনল অল্প কয়েকজন। বেশিরভাগই পড়ে রইল পূর্বসূরিদের বিশ্বাসে। সালেহ (আ.)-এর উটনী অনেক বড়। বিশাল এক দেহ তার। অন্য পশুরা তাকে দেখে ভয় পেত। দূরে সরে থাকত। সে কূপে পানি খেতে গেলে তারা ধারেও ঘেঁষত না। কওমের লোকজন হাজির হলো সালেহ (আ.)-এর কাছে। এর একটা বিহিত দরকার। সালেহ (আ.) সমাধান দিলেন, একদিন তাদের পশুরা পান করবে, আরেকদিন এ উটনী। এভাবেই চলছিল।

একদিন কওমের লোকেরা গোপনে পরামর্শ সভা ডাকল। তাদের সমস্যা এখন এ উটনীটি। খানিক সময় ধরে পরামর্শ চলল। কোনো কূল-কিনারা করতে পারল না তারা। ‘হত্যা করলেই তো ঝামেলা চুকে যায়।’ কেউ কেউ বলে উঠল। সবাই এ মতে সায় দিলো। সভার মধ্য থেকে নয়জন দাঁড়িয়ে গেল। হত্যা করার জন্য প্রস্তুত তারা। রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে এলো সালেহ (আ.)-এর বাড়ি। সন্তর্পণে ছুরি চালাল উটনীর গলায়। নিমিষেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল উটনীটি।

সকাল হতেই সালেহ (আ.) এ দৃশ্য দেখলেন। অবাক হলেন বেশ। ভারাক্রান্ত হলো তার হৃদয়, এরা তো অবাধ্যতার চরম সীমায় পৌঁছে গেছে! তিনি কওমের মাঝে গিয়ে দাঁড়ালেন। উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের হাতে তিনদিন সময় আছে। যা করার করে নাও। অচিরেই আল্লাহর আজাবে ধ্বংস হবে।’ কওম হেসে উড়িয়ে দিল তার কথা। উপহাসের বাক্যবাণে জর্জরিত করল তাকে। সালেহ (আ.) দুঃখে ভারাক্রান্ত হলেন। এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল হত্যাকারী সেই নয়জন। আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হলো তাদের ওপর। নিজেদের বাঁচানোর মরণপণ চেষ্টা করল তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

এদিকে প্রথম দিন কওমের লোকদের চেহারা হলুদ হয়ে গেল। তারা তো বিস্ময়ে হতবাক। তবু ঈমান আনল না। দ্বিতীয় দিন তাদের মুখ লাল হয়ে গেল। তৃতীয় দিন কুচকুচে কালো হলো। তারা বুঝে ফেলল, আজাব চলে এসেছে। গত রোববার সকালে ভোরের আলো ফুটতেই আকাশে বিকট গর্জন, জমিনে ভূমিকম্প। একে একে ধ্বংস হলো তারা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/২১১)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত