লুত (আ.)-এর উম্মত সমকামিতায় লিপ্ত ছিল। এ অপরাধের দায়ে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠিন শাস্তি দেন। জমিন উল্টিয়ে তাদের ধ্বংস করেন। তারা যে স্থানে বসবাস করত, সেখানেই তাদের শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। সে স্থানকেই এখন ডেডসি বা মৃত সাগর বলা হয়। এটা কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানব জাতির জন্য আসমানি নিদর্শন। সমকামিতার পরিণতি ও ঘৃণ্য বিষয়টি বোঝার জন্য এ নিদর্শন খুবই প্রতিক্রিয়াশীল। বোদ্ধামহলে তা চিন্তা ও উপদেশ গ্রহণের বিশাল উপকরণ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, লুত (আ.)-এর জাতি ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী যে স্থানে বসবাস করতেন, সে স্থানটি বর্তমানে ট্রান্সজর্দান বা ধুমজর্দান নামে পরিচিত। বর্তমানে সে সাগরকে মৃত সাগর বা ডেডসি বলা হয়। আরও জানা যায়, ‘সুদুম’ ছাড়া এ অঞ্চলে আরও চারটি বড় বড় শহর ছিল। প্রত্যেকটি শহরের মাঝখানে বড় বড় সুদৃশ্য বাগান ছিল। ‘ওদুন’ নামে যে এলাকা ছিল, তারই আশপাশে ছিল ‘সুদুম’ এবং ‘আমুরা’ এলাকা। জানা যায়, এখন যেখানে সমুদ্র, সেখানে ইতিহাসের কোনো এক সময়ে ছিল বিশাল মরুভূমি। কালক্রমে সেই মরুভূমি প্রকৃতির খেয়ালে শহরে রুপান্তরিত হয়। তারপর আবার আসমানি গজবের ফলে সাগরতলে বিলীন হয়ে যায়। দৃশ্যমান মৃত সাগর জর্ডান ও ইসরাইল সীমান্তে অবস্থিত। এ বিষ্ময়কর সাগরটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নিচু জায়গায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মিটার নিচু, অতি লবণাক্ততা, যা ২৪০ ভাগ। স্বাভাবিক লবণাক্ততার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। এ পানিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ও বিষাক্ত পদার্থের কারণে কোনো প্রাণী বাঁচে না বলে। তাই একে মৃত সাগর বলা হয়। এর পানির আপেক্ষিক ঘনত্ব এত বেশি যে, এতে হাত-পা বেঁধে ফেলে দিলেও কেউ ডোবে না। এ হ্রদে লবণ জমে অনেক অদৃশ্যমান পিলার সৃষ্টি হয়েছে।
এ স্থানেই একসময় লুত (আ.)-এর জাতি বাস করত। তারা লিপ্ত ছিল হীন কর্মকাণ্ড সমকামিতায়। ফলে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নির্ধারিত হয়। এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সে এলাকা সমুদ্রের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। গবেষকদের ধারণা, ভূমিকম্পে ইতালির পম্পেই নগরী যেমন শত শত মিটার নিচে চলে গেছে, ঠিক তেমনি লুত (আ.)-এর জাতি ভূমিকম্পে শত শত মিটার মাটির নিচে চলে গেছে। সে এলাকা সমুদ্রের তলদেশে নিমজ্জিত রয়েছে। সে সময় লুত (আ.)-এর উম্মত এমন একটি অপরাধ অবিষ্কার করেছিল, যা তখন পর্যন্ত কোনো জাতি-এর সঙ্গে পরিচিত ছিল না। আর সেই জঘন্যতম অপরাধ হলো সমকামিতা। সমকামিতা হলো- পুরুষ বিপরীত লিঙ্গ নারীর সঙ্গে বৈধ প্রক্রিয়ায় যৌনতায় লিপ্ত না হয়ে পুরুষ পুরুষের পায়ুপথে সঙ্গম করা। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত ও পাপের কাজ। এ অপরাধের কারণে আল্লাহতায়ালা লুত নবীর উম্মতকে ধ্বংস করেছিলেন।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘লুতকে আমি নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি। তারপর স্মরণ কর, যখন সে নিজ জাতির লোকদের বলল, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গেছ যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছ, যা তোমাদের আগে পৃথিবীর কেউ করেনি! তোমরা নারীদের ছেড়ে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পূরণ করছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালঙ্ঘনকারী।
কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এ লোকদের তাদের নিজেদের জনপদ থেকে, এরা নিজেদের বড় পবিত্র বলে দাবি করে। শেষ পর্যন্ত লুত (আ.) ও তার ঘরের লোকদের (তার স্ত্রী ছাড়া, যে পছন্দের লোকদের সঙ্গে ছিল) বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের ওপর এক প্রচণ্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ, ওদের সেই অপরাধী লোকদের কী পরিণাম হলো।’ (সুরা আরাফ : ৮০-৮৪)।