যেভাবে মনে সুখ আসে

জিকিরে গোনাহ মাফ হয়

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রহমতুল্লাহ শিহাব

মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির প্রধান উৎস হলো জিকির। এটি শুধু ইবাদত নয়, জীবনের শান্তি ও পরিত্রাণের অতুলনীয় উপায়। আল্লাহর নামের স্মরণ আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর, প্রশান্ত করে তোলে। দুনিয়ার বুকে চলতে গিয়ে কখনো কখনো আমরা নানা ধরনের অস্থির হই। ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা ও পেরেশানি আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। অনুভব করি ক্লান্তি। ডুবে যাই হতাশার অন্ধকারে। সবকিছু তখন হয়ে ওঠে বিষাদময়। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় জিকির। জীবনের প্রতিটি স্তরে শান্তি পেতে জিকির তুলনাহীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : ২৮)।

জিকিরের অর্থ ও তাৎপর্য : জিকির অর্থ স্মরণ করা। ইসলামি পরিভাষায়- এটি আল্লাহর নাম, গুণাবলি ও প্রশংসা উচ্চারণের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা বোঝায়। জিকির কেবল মুখের উচ্চারণ নয়, অন্তরের অনুভূতি, মননশীলতা ও আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। মোমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব : ৪১)। জিকির হলো আল্লাহর স্মরণে হৃদয়ের প্রশান্তি লাভ করার মহান উপায়। এটি জীবনের গভীর প্রেরণা ও দিকনির্দেশক।

জিকিরের বিশেষ ফজিলত : জিকিরে গোনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ রেখে প্রতিদিন সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি ১০০ বার পাঠ করে, তার সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।’ (বোখারি : ৬৪০৫)। জিকিরকারীদের জন্য রয়েছে অগ্রগামিতার সুসংবাদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুফাররিদুনরা অগ্রগামী হয়েছে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মুফাররিদুন কারা?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নর-নারী।’ (মুসলিম : ২৬৭৬)। জিকিরকারীকে আল্লাহতায়ালা আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাত শ্রেণির মানুষ আছে, যাদের আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। তাদের মধ্যে একজন সেই ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করল এবং তার দু’চোখ অশ্রুতে ভেসে গেল।’ (বোখারি : ৬৪৭৯, মুসলিম : ১০৩১)।

জিকিরহীনতার প্রভাব : যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ থাকে, তার জীবন মানসিক অস্থিরতা ও শয়তানি প্রভাবে ভর করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দিই। এরপর সে-ই হয় তার সঙ্গী।’ (সুরা জুখরুফ : ৩৬)। যে অন্তর আল্লাহর জিকির থেকে উদাসীন, তা জীবিত নয়, মৃত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার রবকে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মতো। (অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে, সে জীবিত; আর যে স্মরণ করে না, সে মৃত)।’ (বোখারি : ৬৪০৭)।