আল্লাহতায়ালা মহত্ব, মহিমা ও অহংকারকে নিজের প্রভুত্বের বিশেষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। পুরস্কার, দয়া, রহমত, ক্ষমা ও এহসান আল্লাহর বিশেষ গুণ। কঠোরতা, ন্যায়বিচারও আল্লাহর অন্যতম গুণ। আল্লাহ তার নিখুঁত গুণাবলি বর্ণনা করেছেন; যা মহাগ্রন্থের প্রথম সুরায় বর্ণিত হয়েছে। কোরআন সর্বোত্তম গ্রন্থ; যা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয়নবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর; যিনি সব সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা। যিনি পরম মেহেরবান ও দয়ালু। যিনি বিচার দিনের মালিক।’ (সুরা ফাতিহা : ১-৩)।
আল্লাহই একমাত্র উপাস্য : আল্লাহ সব সৃষ্টির স্রষ্টা। তিনিই একমাত্র উপাস্য। আল্লাহ পরম করুণাময় ও দয়ালু; যা আল্লাহর দয়া ও রহমতের নিদর্শন। আল্লাহ বিচার দিনের মালিক। তিনিই আমাদের হিসেব নেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদ- স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। যদি কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসেব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট।’ (সুরা আম্বিয়া : ৪৭)। এগুলো হচ্ছে, দুনিয়া ও আখেরাত সৃষ্টির বাস্তব অবস্থা। এ জন্যই আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, রাসুল পাঠিয়েছেন, পবিত্র গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন; যেন সবাই একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই।’ (সুরা শুরা : ১১)। সৃষ্টিতে আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই, আল্লাহর রাজত্বে কোনো শরিক নেই, আল্লাহ ছাড়া কেউই উপাসনার যোগ্য নেই। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা আশা করি, তাকেই ভয় করি এবং তার কাছেই সাহায্য চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।’ (সুরা জারিয়াত : ৫৭-৫৮)।
আল্লাহর প্রভুত্বের গুণ হচ্ছে, তিনি তার সৃষ্টিকে সাহায্য করেন, দয়া করেন এবং ভালোবাসেন। সৃষ্টিকুল আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ। আসমান, জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু আমরা জানি আর না জানি, সবকিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.) এবং ফেরাউনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি? মুসা বলল, তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, তোমরা কি শুনছ না? মুসা বলল, তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও পালনকর্তা। ফেরাউন বলল, তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রাসুলটি নিশ্চয়ই বদ্ধ পাগল। মুসা বলল, তিনি পূর্ব, পশ্চিম ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বোঝ।’ (সুরা শুয়ারা : ২৩-২৮)।
সব সৃষ্টি তার তাসবিহ পাঠ করে : আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে যাকে যেভাবে ইচ্ছে জিজ্ঞেস করা যায়। তারা মুখে উত্তর না দিতে পারলে পরোক্ষভাবে আল্লাহর অস্তিত্বের জানান দেবে। প্রত্যেক বস্তু এবং জীব আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে; যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তবে আল্লাহ যদি কাউকে জানান, তাহলে সে বুঝতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছু তারই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এমন কিছু নেই, যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৪৪)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কি দেখনি! নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে এবং সূর্য, চাঁদ, তারকারাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও অনেক মানুষ আল্লাহকে সেজদা করে। আবার অনেকের ওপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন।’ (সুরা হজ : ১৮)।
হৃদয়ে মননে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা : গভীর চিন্তার মাধ্যমে আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় লাভ করা যায়। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। আল্লাহকে স্মরণ, তার সত্তার ব্যাপারে চিন্তার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর একত্ববাদের ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। আল্লাহর শক্তি সম্পর্কে বিশ্বাস অর্জন হয়। যে আল্লাহর মহত্ত্বের কথা চিন্তা করে, তাঁকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাকে পথ দেখান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাতদিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে), পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থ সৃষ্টি করনি। সব পবিত্রতা তোমার, আমাদের তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোজখে নিক্ষেপ করলে, তাকে সব সময় অপমানিত করলে; আর জালেমদের জন্য তো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি, একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের সব গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সব দোষত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেককারদের সঙ্গে। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রাসুলদের মাধ্যমে এবং কেয়ামতের দিন আমাদের তুমি অপমানিত কোরো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না। অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এ বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সেসব লোক যারা হিজরত করেছে, তাদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের ওপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। তাদের প্রবিষ্ট করব জান্নাতে; যার তলদেশে নহরগুলো প্রবাহিত। এ হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিনিময়। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম বিনিময়।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯৫)।
মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- আল মামুন নূর