ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন দিনের অঙ্গীকার

নতুন দিন মানেই নতুন দৃষ্টিকোণ, নতুন সৃজনশীলতা এবং নতুন উদ্যমে পথচলা। প্রত্যেকটা নতুন দিন মানুষের জন্য নিয়ে আসে নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনা এবং পরিবর্তনের নতুন সুযোগ। তাই ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য হোক নতুন বছরের নতুন অঙ্গীকার। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এমন কিছু অঙ্গীকার বা কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন- যোবায়ের ইবনে ইউসুফ
নতুন দিনের অঙ্গীকার

মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ : ইসলাম মানুষকে মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে এবং তার প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো উত্তম পন্থা প্রবর্তন করবে, সে এর সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে করবে, সে এর বিনিময়েও সওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো খারাপ কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে সে কাজ করবে, তাদের বোঝাও তাকে বহন করতে হবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোনো অংশেই কমবে না।’ (মুসলিম : ১০১৭)।

অন্যায়-অপরাধ বর্জন : ইসলাম কোনো অবস্থাতেই অন্যায়কে সমর্থন করে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোনো প্রকার অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না।’ (সুরা আন?আম : ১৫১)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, তাকে তার সমপরিমাণ শাস্তি দেয়া হবে।’ (সুরা গাফির : ৪০)। তাই সকল প্রকার অন্যায়-অপরাধ বর্জন হোক নতুন দিনের অঙ্গীকার।

চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন : মানবজাতির জন্য উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি কল্যাণকর কিছু নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং কেয়ামতের দিন?ও আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।’ (তিরমিজি : ২০১৮)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে মোমিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে অধিক ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না।’ (তিরমিজি : ২০০২)। তাই মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজ চরিত্র উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট হওয়া।

জ্ঞানার্জনে মনোযোগ : ইসলামে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৪)। অথচ মুসলিমরাই আজ জ্ঞানার্জনে পিছিয়ে। তাই সকলের উচিত, দ্বীন ও দুনিয়াবি জ্ঞান বাড়ানোর জন্য উদ্যোগী হওয়া।

সময়ের সঠিক ব্যবহার : অর্থ-সম্পদ হারালে তা ফিরে পাওয়া সম্ভব, কিন্তু সময় হারালে তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। যারা অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করে, তারা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সময়ের কসম! বস্তুত মানুষ অতি ক্ষতির মধ্যে আছে, তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে।’ (সুরা আসর : ১-৩)। তাই নতুন দিনের সংকল্প হোক, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানবতার কল্যাণে সময়ের সঠিক ব্যবহার।

কর্তব্য নির্বাহে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া : প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজ, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য করণীয় কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালন করা তার জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেসও করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেকেই নিজ অধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর গোলাম আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি : ২৫৫৪)।

আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো : ইসলাম আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয় এবং এর বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দান করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, তার জন্য আমি (জান্নাতের) পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল : ৫-৭)।

অন্যের কল্যাণ কামনা : ইসলামের প্রধানতম শিক্ষা হলো অন্যের কল্যাণ কামনা করা। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং তাদের কল্যাণ কামনা করা ঈমানের অন্যতম চিহ্ন।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সে, যে অন্য মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী।’ (তাবারানি, মুজামুল কাবির : ১০৫৩৯)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘আল্লাহ তার বান্দার সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)। তাই মানুষের উচিত সর্বাবস্থায় অন্যের কল্যাণ কামনা করা।

লেখক : ইমাম ও খতিব, ফুকুরহাটি মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, ভাঙ্গা, ফরিদপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত