রাজধানীর ব্যাংক পাড়ায় সক্রিয় আছে একটি চক্র, যারা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রোববার দিনগত রাতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তাদের সম্পর্কে জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- পিযুষ সুর, মো. হারুন, জোবায়ের হোসেন পারভেজ, আরিফ হোসেন ও খোকন চন্দ্র দেবনাথ। এসময় তাদের কাছ দুটি কালো রঙের নোয়া মাইক্রোবাস, একটি সাদা রঙের প্রভোক্স প্রাইভেট কার, দুটি পুলিশের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট ও একটি হ্যান্ডকাপ জব্দ করা হয়েছে।
এসময় হারুন অর রশীদ জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে এক ভুক্তভোগী রিকশা যোগে মতিঝিল সিটি সেন্টার পার হয়ে অলিম্পিয়া বেকারির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একটি কালো রঙের নোয়া গাড়ি তার গতিরোধ করে। এরপর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার কাছে অবৈধ মালামাল আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর তার সঙ্গে থাকা ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তিকে রাজধানীর শাপলা চত্বর, ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা, ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা কুচিয়ামারা ব্রিজ হয়ে ঢাকা মাওয়া সড়কে পিডিএল ক্যাম্পের সামনে নামিয়ে দিয়ে মাওয়ার দিকে চলে যায় ভুয়া ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
হারুন অর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। পরে ওই ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগও ছায়াতদন্ত শুরু করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ঘটনাস্থলের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় কালো রঙের নোয়া গাড়িটি পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। গাড়ির মালিক ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদে, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, এ চক্রটি পারস্পরিক সহযোগিতায় প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হওয়া এবং মানি এক্সচেঞ্জে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে। কোনো একজনকে শনাক্তের পর তার পিছু নেয় চক্রের কেউ একজন। পরে তার পিছু পিছু গাড়ি নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা পয়সা ও মূল্যবান মালামাল কেড়ে নিয়ে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে ফেলে যায়।
এ চক্র দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ চক্রের প্রধান শহীদুল ইসলাম মাঝি। তার বিরুদ্ধে সারা দেশে মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে শহীদুল ইসলাম মাঝিকে ডিবি পুলিশ একাধিকবার গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে।’ পলাতক শহীদুল ইসলাম মাঝিসহ তার অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তাররে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান ডিবি প্রধান।