ঢাকায় সীমাবদ্ধ বিএনপির শরিকদের যুগপৎ কর্মসূচি
নেতাকর্মীদের কম উপস্থিতিতেও সংশ্লিষ্টদের অসন্তোষ
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রকীবুল হক
সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে ৫টি জোটের অধীনে অন্তত ৩৬টি দল ও ১৫টি সংগঠন। এরমধ্যে ভেঙে দেয়া ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক ছাড়াও বামপন্থী ও সরকারবিরোধী কিছু দল রয়েছে। যুগপৎভাবে গণমিছিলের প্রথম কর্মসূচির পর গতকাল বুধবার বিএনপির পাশাপাশি ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে গণঅবস্থান পালন করে সংশ্লিষ্ট শরিকরা। তবে ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি ১০ সাংগঠনিক বিভাগে এ কর্মসূচি পালন করলেও শরিকরা শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া ঢাকায় অনুষ্ঠিত শরিকদের গণঅবস্থানে খুব কমসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিয়েও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজয়নগরে ১১ দলীয় জোটের গণঅবস্থানে ৬৫ জনের উপস্থিতি : বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিজয়নগরের আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে ১১ দলীয় ‘সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট’। বুধবার বেলা ১১টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দেখা যায়, বিজয়নগরের আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে ১১ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে সব মিলিয়ে ৬৫ জন অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪০ জন। বাকি ২৫ জন ফুটপাতে বসে ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৮ ডিসেম্বর বিএনপির সমমনা ১১ দলীয় এ জোটের আত্মপ্রকাশ হয়। এর নেতৃত্বে আছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
১১ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী। তিনি বলেন, ছোট দলের কর্মসূচিতে লোকজন থাকতে চান না। শুরুতে শতাধিক লোক ছিলেন। পরে অনেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কর্মসূচিতে চলে গেছেন। কর্মসূচিতে লোকসংখ্যা কম হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এনপিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এখানে যারা উপস্থিত, তাদের বেশির ভাগই এনপিপির লোক। এছাড়া দেশের অন্য কোনো বিভাগে জোটটির কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যায়নি।
বিজয়নগরে ‘১২ দলীয় জোটের’ অবস্থান : গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিজয়নগর পানির ট্যাংকি সংলগ্ন রাস্তায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে ‘১২ দলীয় জোট’। তবে এতে নেতাকর্মীদের খুব বেশি উপস্থিতি ছিল না। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে জোটের বক্তারা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন বেগবান করার জন্য রাজপথে সবাইকে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান। অবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, জেলা-উপজেলা সদরে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এ জোটটিও শুধু ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেছে বলে জানান, অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। একইভাবে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো জোট বা দল ঢাকার বাইরে কর্মসূচি পালন করেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর কারণ প্রসঙ্গে ডা. ইরান বলেন, কোনো কোনো জোটের সামর্থের অভাব আবার কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব আছে। আগামীতেও ঢাকার বাইরে এসব জোটের কর্মসূচি পালন হবে কি না-তাও এখন বলা যাচ্ছে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান: স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাত দলীয় ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। সেখান থেকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ভবনের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশের ঘোষণা দেয় জোটটি। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম সভাপতির বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রমুখ।
নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিতে পারেনি ১৫ সংগঠনের ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ : কয়েকদিন আগে ১৫টি সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর আকরাম টাওয়ারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে তারা। তবে পুলিশের বাধায়ে সেখানে দাঁড়াতে না পেরে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেন বলে জোটটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান জানিয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে কোথাও তাদের কর্মসূচি পালিত হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের পূর্বপাশে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম (মন্টু) এবং কারওয়ান বাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও আলাদা আলাদাভাবে একই কর্মসূচি পালন করে। তবে এসব দল ও জোটের কর্মসূচিতে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ঢাকার বাইরে কোথাও তাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না বলেও জানা গেছে।
ভিন্ন কর্মসূচিতে ছিল জামায়াত : বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সাবেক ২০ দলীয় জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী প্রথম কর্মসূচি-ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল করলেও গতকাল কোথাও অবস্থানে ছিল না দলটি। এরপরিবর্তে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে মহানগরগুলোতে আলোচনা সভা করে জামায়াত। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী যে যুগপৎ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে অন্য শরিকরা সমর্থন জানালেও এ নিয়ে জামায়াতের কোনো অবস্থান জানা যায়নি। গতকাল আলোচনা সভা থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।