গত বছর ১১ জানুয়ারি চিরবিদায় নেন দেশের চিত্রশিল্প জগতের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মাহমুদুল হক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ১২ জানুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরদিন মধ্যাহ্নে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে তাকে দাফন করা হয়। রামপালের শ্রীফলতলায় কোরআন খতম, দোয়া অনুষ্ঠান ও মাহমুদুল হকের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ‘আমাদের গ্রাম’ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র তথা প্রকল্পে স্মরণ সভা ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্য দিয়ে এই গুণী শিল্পীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। তার সহধর্মিনী শিখা মাহমুদ ও সন্তান সাদাত ইবনে মাহমুদ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
মাহমুদুল হকের জন্ম ১৯৪৫ সালে রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামে। তিনি ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকারি চারু ও কারু কলা কলেজ (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে বিএফএ এবং পরে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএফএ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি ছাপচিত্রের ওপরে জাপান থেকে ২ বছরের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছাপচিত্র বিভাগের প্রধানসহ চারকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং পরে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে বিদেশে শিল্পী মাহমুদুল হকের শিল্পকর্মের ৩৯টি একক এবং অনেক যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে জাপানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান লাভ করেন।
এছাড়া জাপানের সুচিউরা সিটি শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা পুরস্কার, ১৯৯২ সালে ১০ম জাতীয় শিল্পকলা প্রদর্শনীতে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার’, ১৯৯৩, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে টানা তিনবার এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে সম্মানসূচক পুরস্কার, কুয়েত আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের ‘সুলতান পদক’সহ দেশে বিদেশে অনেক পদক ও পুরস্কার লাভ করেণ। দেশে জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগ্রাহক এবং বিদেশের অনেক চিত্রশালায় তাঁর শিল্পকর্ম সংগৃহীত হয়েছে।