জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন নতুন বিষয় প্রশিক্ষণে যুক্ত করে শিক্ষকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষকরাই মূলত এই প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাদের আরও যোগ্য, দক্ষ করে গড়া তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান শিক্ষক প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছেন পুরো শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে। যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয় প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মেন্টাল হেলথ, জিআইএস ও রিমোট সেন্সিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর এরইমধ্যে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এছাড়া, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন হিসেবে যুক্ত থাকছেন দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা।
মেন্টাল হেলথ : গত বছর ১৭ ডিসেম্বরে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান। ভার্চুয়ালি প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়। ১১ দিনব্যাপী চলা এই প্রশিক্ষণ ২৮ ডিসেম্বর শেষ হয়। মেন্টাল হেলথের প্রশিক্ষণে প্রথম ব্যাচের কোর্স উপদেষ্টা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। রিসোর্স পার্সন হিসেবে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক জোবেদা খাতুন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. সেলিম হোসেন ও জাকিয়া রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ইফরাত জাহান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. শাহিন মোল্লা ও জান্নাতুল ফেরদাউস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি কলেজের ৩৯ জন শিক্ষক এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। আগামী ২৩ জানুয়ারি মেন্টাল হেলথ বিষয়ে দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
জিআইএস ও রিমোট সেন্সিং (ব্যবহারিক) : যুগের চাহিদার আলোকে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও রিমোট সেন্সিং (দূর অনুধাবন) বিষয়েও প্রশিক্ষণ শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আগামীকাল ১৫ জানুয়ারি থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হবে। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। পুরো প্রশিক্ষণটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের জিআইএস ল্যাবে ফেস টু ফেস অনুষ্ঠিত হবে। প্রশিক্ষণের কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত থাকবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম নজরুল ইসলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি, বেসরকারি কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২৪ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। একইভাবে আরও তিনটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস : মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ধারণ ও লালনের লক্ষ্যে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ শীর্ষক একটি কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে শিক্ষার সব শাখার সিলেবাসে অবশ্য পাঠ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কলেজ পর্যায়ে ইতিহাস চর্চায় সত্যনিষ্ঠ জ্ঞানপ্রবাহ সৃষ্টির প্রয়োজনে ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আয়োজন করেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুরে মূল ক্যাম্পাসের সিনেট হলে গত মঙ্গলবার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৫ দিনব্যাপী আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ চলবে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের ৮০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছেন।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে গৃহীত কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে সিইডিপির আওতায় ২৫টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের (অনলাইন ১২ ও ১৩তম ব্যাচ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ব্যবস্থাপনা, দর্শন, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, সমাজকর্ম এবং প্রাণিবিদ্যাসহ ৮ বিষয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই ব্যাচে ৩০৭ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। সভাপতিত্ব করেন স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম।
এছাড়া, ২৬ ও ২৭তম বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৮টি সাবজেক্টের মধ্যে ২৬তম ব্যাচে ইতিহাস, ইংরেজি, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। আর ২৭তম ব্যাচে ব্যবস্থাপনা, ইসলামিক স্টাডিজ, পদার্থবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
সিইডিপি : কলেজ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিইডিপি) কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হলো দেশে-বিদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ। আন্তর্জাতিক একাডেমিক পার্টনার ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম মালয়েশিয়ার (ইউএনএম) সহায়তায় মাস্টার ট্রেইনার, অধ্যক্ষ, ফিউচার লিডারসহ বিভিন্ন হ্যাটাগরিতে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ১৬ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ও প্যাডাগোজির ওপর মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ দুটি বিষয়ের ওপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য ১০ দিনের ‘শর্ট কোর্স’র ওপর প্রশিক্ষণ হবে।
সার্বিক বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানোন্নয়নে বদ্ধপরিকর। আমরা অচিরেই সারা দেশের অধিভুক্ত কলেজের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসব। প্রশিক্ষণে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করে শিক্ষকদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলব। এরইমধ্যে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে আস্থা সৃষ্টি করতে ‘মেন্টাল হেলথ’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেছি। আমরা চাই তরুণদের মধ্যে উদ্যম, অনুপ্রেরণা এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সদিচ্ছা তৈরি হোক।