বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় স্পোর্টসকারের আদলে গাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহ নগরীর এক অটোমোবাইল মেকানিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুরোনো টয়োটা স্টারলেট মডেলের একটি গাড়ি ভেঙে ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর মডেলের এই গাড়িটি তৈরির কারিগর নগরীর দিঘারকান্দা এলাকার শাহাদাৎ মোটরসের কারিগর আব্দুল আজিজ (৫২)। তিনি জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার ঝাকুনিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
দীর্ঘ ১৫ মাসের চেষ্টায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হলুদ রঙে ১৫০০ সিসি গাড়িটি এখন ময়মনসিংহের সর্বমহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই গাড়ির হেডলাইট, টেইল লাইট, বডি ডিজাইন, সিটের গঠন ঠিক ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের গাড়ির মতোই। সেই সঙ্গে ‘ল্যাম্বরগিনি’র মতো এই গাড়ির দরজাগুলোও খুলে উঠে যায় উপরের দিকে।
গতকাল সোমবার দুপুরে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এই গাড়ি তৈরির কারিগর আব্দুল আজিজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই ঢাকা উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় টানা ২১ বছর ওয়ার্কশপ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সেখানে আমার উস্তাদ নজরুল ইসলামের কাছ থেকে এই কাজের শিক্ষা গ্রহণ করি। তবে গত ৪ বছর ধরে ঢাকা থেকে এসে ময়মনসিংহের ওই ওয়ার্কশপে কাজ করছি।
এখানে এসে কাজ শুরু করেই একটি উন্নত প্রযুক্তির স্পোর্টস কার তৈরির পরিকল্পনা করি। সেজন্য আমি ৩ হাজার টাকায় একটি ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর মডেলের একটি খেলনার স্পোর্টস কার কিনে আনি। এরপর টানা তিন মাস দিন-রাত ইউটিউবে ভারত ও ইন্দোনিশিয়ায় তৈরি হওয়ায় এই কারের নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ধারণা নেই। প্রথমদিকে এসব কাজ শুরু করায় অনেকেই আমাকে উপহাস ও হতাশ করেছে। কিন্তু আমার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি টয়োটা স্টারলেট মডেলের গাড়ি কিনে প্রথমে সম্পূর্ণ বডিটি কেটে ফেলে দেই। তারপর ল্যাম্বরগিনির আদলে বানানো শুরু করি। তবে এই গাড়ির পার্টস পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ বাংলাদেশে এই ধরনের গাড়ি নেই। তবুও অনেক কষ্ট করে এই গাড়ি তৈরি করেছি। এতে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন ইমন নামে এক সহকর্মীসহ আরও অনেকেই। তবে গাড়িটির বাহ্যিক দিকের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলেও ভেতরে এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এজন্য আরও কয়েক লাখ টাকা দরকার।
তিনি আরও বলেন, আমি সাধারণ মেকানিক। ছোট বেলায় মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। উস্তাদ হাতে-কলমে যা শিখেয়েছে, তাই শিখেছি। তবে বিশ্বাস করি মানুষের সদিচ্ছা ও লক্ষ্য থাকলে যে সবকিছু সম্ভব, তা আমি দেখাতে চেয়েছিলাম। এখন সরকারের কাছে দাবি, আমার তৈরি এই গাড়িটি যেন দেশের সড়কে চলাচল করতে পারে, সেজন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। না হলে আমার স্বপ্ন ও পরিশ্রম হবে মূল্যহীন। সেই সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আমাকে সহযোগিতা করে, তাহলে আমি কোনো ব্র্যান্ডের আদলে নয়, বাংলাদেশি নিজস্ব মডেলেই গাড়ি তৈরি করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।