২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ও মৌলিক অধিকার আদায়সহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন ইমারত নির্মাণ শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে এসব দাবি জানায়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাত হলো নির্মাণ খাত। এই খাতে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন। প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও রয়েছে আমাদের দেশের সমপরিমাণ নির্মাণ শ্রমিক। আধুনিক নাগরিক সভ্যতা বিনির্মাণের মূল কারিগর হলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। দেশের দালান কোঠা, ব্রিজ-কালবার্টসহ সব নান্দনিক সৌন্দর্য ও অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে নীরবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিকরাও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সমানভাবে ভূমিকা রেখে চলছেন।
তারা আরও বলেন, যাদের শ্রমে ঘামে জাতীয় অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, দেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হতে চলছে সেই নির্মাণ শ্রমিকরা এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাষ্ট্রের কাছে তাদের কাজের তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। নেই সামাজিক সুরক্ষা। এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত বা নিহত হন। অনেকেই দুর্ঘটনায় সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারান ও পঙ্গুত্ববরণ করেন। যে শ্রমিকরা দেশ গড়ার কারিগর স্বাধীনতার ৫ দশক পরও তাদের মজুরি, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আজও আন্দোলন করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। তাই নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবি জানান বক্তারা।
নির্মাণ শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- সরকারি উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা শহরে থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক এবং সারা দেশে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক নির্মাণ কলোনি স্থাপন করে সুলভ মূল্যে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেয়ার মাধ্যমে নির্মাণ শ্রমিকদের বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে; কলোনিতে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল এবং চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে; বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা প্রতি মাসে একবার করতে হবে; তহবিল থেকে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং সাহায্যের আবেদন ফরমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে; শ্রম আইনের আওতায় নির্মাণ শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ইনসাবের সভাপতি মো. রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, ইনসাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, গণতন্ত্রী পার্টির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন সেলিমসহ ইনসাবের জেলা ও থানার নেতারা।