দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
মালয়েশিয়ায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট অস্থিতিশীলতার আভাস
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
যখন একজন রাজনীতিবিদ সংখ্যাগরিষ্ঠ আইন প্রণেতাদের সমর্থনের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন তখন স্থিতিশীল সরকারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা যখন দুইজন রাজনীতিবিদ করেন তা বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। নভেম্বরের নির্বাচনের পর মালয়েশিয়ায় ঠিক এরকম পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে।
একটি পরিবর্তন নিয়ে মালয়েশিয়ার নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখন এক দলীয় রাষ্ট্র থেকে ভগ্ন রাজনৈতিক জগাখিচুড়িতে পা দিয়েছে দেশটি। কারণ কোনো দলই পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে যে সরকারই আসুক না কেন তা আগেরগুলোর থেকে শক্তিশালী হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাউকে এককভাবে বিজয়ী না করে ভোটাররা নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) ১৯৫৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে। অথচ এখন নির্বাচনি বিস্মৃতির প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। পাঁচ বছর আগে এইএমএনও নেতৃত্বাধীন জোট সংসদের ৬০ শতাংশ আসনে জয় পায়। কিন্তু বেশ কিছু কেলেঙ্কারির কারণে তখন থেকে দলটি বেকায়দায়। আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইভাবে আহম্মদ জাহিদ হামিদিও দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগের সম্মুখীন। এবার সেই ইউএমএনও মাত্র ১২ শতাংশ আসনে জয় পেয়ে চতুর্থ বড় দলে পরিণত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকজন বড় বড় রাজনীতিবিদ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাহতির মোহাম্মদ। তিনি এই নির্বাচনে জয় পাননি।
৭৫ বছর বয়সি দুই প্রবীণ রাজনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১১১টি আসন সংগ্রহ করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন পিএই-এর সভাপতি আনোয়ার ইব্রাহিম, যার ৮১টি আসন রয়েছে এবং মুহিউদ্দিন ইয়াসিন, যার পেরিকটান ন্যাশনাল পিএন জোট ৭৩টি আসন জিতেছে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় দল মুহিউদ্দিনকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। এর মানে হলো ইউএমএনও-এর আসনের জোট থেকে সমর্থন দুই প্রতিযোগীর মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে।
ইইএমএনও এর ইসমাইল সাবরি ইয়াকব জাহিদের নির্দেশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন আহ্বান করেছিলেন। এইএমএনও নেতা কিছু রাজ্য-নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন এবং সাবরি তখন স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিতে এক সঙ্গে প্রচারণা চালান। যদিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জাহিদ উল্টো সংকেত দেন।
এদিকে পিএন জোট দাবি করেছে, তারা বেশিরভাগ বিজয়ী প্রার্থীদের সমর্থনের ঘোষণা পেয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, কিছু ইউএমএনও সদস্য এরই মধ্যে জাহিদকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে হিশামুদ্দিন হুসেইন আনোয়ারকে সমর্থন করার কথা অস্বীকার করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ঝুলন্ত সংসদে বিজয়ীকে সমর্থন করার সিদ্ধান্তের জন্য সুপ্রিম কাউন্সিলের সর্বসম্মত অনুমোদন প্রয়োজন, যা আসার সম্ভাবনা কম। মূলত গত কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত দেশটি বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে।
নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ঝুলন্ত পার্লামেন্টের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।