ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড

চেয়ারম্যান, পরিচালক ডাক্তারদের অব্যাহতির আবেদন

চেয়ারম্যান, পরিচালক  ডাক্তারদের অব্যাহতির আবেদন

রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের মামলায় হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ ডাক্তারদের অব্যাহতির আবেদন করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি হাসপাতালের প্রশাসন ও এসি বিভাগের ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ শাহানুর রহমান। অভিযোগপত্রে মামলার এজহারনামীয় আসামি ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, এমডি ফরিদুর রহমান খান, সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান, পরিচালক আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্স এবং সেফটি ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের মামলার দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গত ১৬ নভেম্বর তারিখে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেয় পুলিশ। সম্প্রতি বিষয়টি জানা যায়। অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, এজাহারনামীয় আসামিরা উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন ও আদেশ মোতাবেক আলাদা কোভিড-১৯ কর্নার স্থায়ীভাবে অবকাঠামো স্বল্প সময়ে তৈরি করা সম্ভব নয় মর্মে অস্থায়ী অবকাঠামো স্থাপনপূর্বক মহামারি মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করেন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মচারী নিয়োগ করেন। এছাড়া এডমিন বিভাগের কর্মরত মো. খাদেমুল ইসলাম, মোহাম্মদ দাউদ আলী, এসি বিভাগের কর্মরত মো. আনোয়ার হোসেন, মো. লিমন মিয়া, আমিনুর ইসলামও মোহাম্মদ ফারুক হাওলাদারের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০৪-ক-১০৯ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির রাসায়নিক বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া মতামতের বরাত দিয়ে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন যে, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা আইসোলেশন ইউনিট অগ্নিপ্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি, ইউনিটে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সংযোজন এবং চিকিৎসারত রোগীদের অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫ (পাঁচ) জন রোগীর মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। ইউনাইটেড হাসপাতালটি স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং সেখানে দেশি ও বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য আসেন। সেই বিবেচনায় আইসোলেশন সেন্টারটি অস্থায়ী সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি না করে অথবা অগ্নিপ্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা উচিত ছিল।

আইসোলেশন সেন্টারটি সকল প্রকারের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ স্থাপন করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হবার প্রয়োজন ছিল বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া আইসোলেশন সেন্টারটি নির্মাণ করা সমীচীন হয়নি বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। দুর্ঘটনা চলাকালীন আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা ৪ টন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) হতে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপণের চেষ্টা, ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ দলকে উপস্থিত হবার জরুরি অনুরোধ জানালে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে তদন্ত কমিটি মত প্রকাশ করে। তাছাড়াও ওই এসি হতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে (ডাক্তার, ৩ জন নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী) অগ্নিনির্বাপণের ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকরী কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। গত ২০২০ সালের ২৭ মে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ যায় পাঁচজনের। নিহতরা হলেন, মো. মাহবুব, মো. মনির হোসেন, ভারুন এ্যান্থনী পল, খাদেজা বেগম এবং রিয়াজউল আলম। তাদের সবাই করোনা উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। এ ঘটনায় রোনাল্ড মিকি গমেজ ২০২০ সালের ৩ জুন হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনকে আসামি করে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী রোনাল্ড মিকি গমেজ গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার এজাহারনামীয় সব আসামিকে অব্যাহতির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেছি। এর আগে এ বিষয় নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। সেখানে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল এবং কর্তৃপক্ষ কোনভাবে দায়ভার এড়াতে পারে না। সেখানে পুলিশ কীভাবে কর্তৃপক্ষের সবাইকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করে! আমরা সবকিছু আদালতে তুলছি, আদালত নথি পর্যালোচনা করে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে। এখন দেখা যাক, পিবিআই তদন্তে কী করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত