‘ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দূর করতে পারে সম্পদ কর’

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের ক্রমবর্ধমান সম্পদ ও আয় বৈষম্য দূর করতে সম্পদশালীদের ওপর সম্পদ কর আদায়ের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সাউথ এশিয়া অ্যালায়েন্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, ইনসিডিন বাংলাদেশ, জনউদ্যোগ, ফাইট ইনইকুয়ালিটি অ্যালায়েন্স ইন সাউথ এশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে ‘সম্পদশালীদের কর আদায় নিশ্চিত করে বৈষম্য মোকাবিলা ও জনকল্যাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার’ দাবিতে এক সংহতি সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও স্যাপির উপদেষ্টা রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমির সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএম আকাশ। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, চলমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হলে নতুন শক্তি, নতুন দল, নতুন করে সংগঠিত হয়ে দ্বিতীয় বিপ্লব ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। এখানের আয়োজকরা এই বৈষম্য দূর করতে কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। একটি প্রস্তাবনা সম্পদ কর আদায়। আমরা যদি বাংলাদেশে সম্পদ কর ঠিকমতো আদায় করতে পারি তাহলে সেটি দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করে ফেলা যাবে। যদি এই দুটি ঠিক করে ফেলা যায় তাহলে এই চলমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে দরিদ্ররা আত্মবিশ্বাস অর্জন করে অন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেরাই লড়ায় করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, কর অফিসগুলোতে কেউ সঠিকভাবে কর দিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় আবার কেউ কর না দিতে চাইলে কর ফাঁকি দিতে চাইলে ঘুষ তো দিতেই হয়। আমরা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করে কিছুটা যদি বৈষম্য কমাতে পারি তাহলেও আমরা কিছুদূর সামনে অগ্রসর হতে পারব। রোকেয়া কবীর বলেন, পৃথিবীজুড়েই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বেড়েই চলেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো যাচ্ছে না। অথচ করোনার সময় মুষ্টিমেয় ব্যক্তি আরও ধনী হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমিক ও নারীরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো ফোরামগুলো ধনী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। আমরা এ ধরনের অর্থনৈতিক আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করি। ধনীদের ওপর যদি উপযুক্ত কর আরোপ করা যায় তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা সম্ভব হবে। আমরা এই সমাবেশ থেকে ধনীদের কাছ থেকে কর নিয়ে দরিদ্র ও নারীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করার দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশের লিখিত দাবি উত্থাপন করেন ইনসিডিন বাংলাদেশের অপারেশন চিফ মুশফিকুর রহমান সাব্বির। এগুলো হলো: সম্পদ কর বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ট্যাক্স ব্যবস্থার পুন ভারসাম্য সৃষ্টি করা; সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির ওপর কর ধার্য করার বিষয়টি নিশ্চিত করা; বার্ষিক নিট কর প্রবর্তন করা।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ডা. মুশতাক হোসেন, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন, জনউদ্যোগের সমন্বয়কারী তারিক হোসেন মিঠুল প্রমুখ। সংহতি সমাবেশে প্রতিবাদী গান করে গানের দল মাদল। সমাবেশ বক্তারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর কর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মজুরি বৈষম্য কমানো, সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত-আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ু বিপর্যয় রোধ করার দাবি জানান।