দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এ মেলা। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিশাল আয়তন জুড়ে মেলার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। কাঠ কাটা, জোড়া দেওয়া, আর পেরেক-হাতুড়ির টুং টাং শব্দে পুরোদমে চলছে স্টল নির্মাণ ও সাজ-সজ্জার কাজ। স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হলেও প্যাভিলিয়নের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। স্টল নির্মাণে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিল্প নির্দেশকরা। সবকিছু তদারকি করছেন প্রকাশকরা। সব মিলিয়ে আগামী কিছুদিন চলবে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। তারপর বসবে মাসব্যাপী প্রাণের মেলা। যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান, শিশু চত্বর ৬৯টি ও প্যাভিলিয়ন থাকছে ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান ও সর্বমোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। মাসব্যাপী এ বইমেলা বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজে যুক্ত আব্দুল মান্নান নামে একজন শ্রমিক বলেন, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ আজকেই শুরু করছি। যথাসময়ে শেষ করা একটু কঠিন হবে, তবুও চেষ্টা করছি। কাজটা যদি ১০দিন আগে থেকে শুরু করা যেত তাহলে ভালো হতো। এখন দিন-রাত কাজ করে শেষ করতে হবে। জিনিয়াস প্রকাশনীর কাজে যুক্ত নির্মাণ শ্রমিক ছোটন বাড়ৈ বলেন, আজকেই মাত্র কাজটা শুরু করলাম। সকাল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। ৩১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা আছে। আমরা সে অনুযায়ী চেষ্টা করছি।
অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২২ তারিখ লটারির পর আমরা কাজ শুরু করেছি। পুরোদমে কাজ চলছে। প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ। ৩০ তারিখের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রবেশ মুখেই প্যাভিলিয়ন পাওয়ায় আমরা খুশি। আশা করি ভালো কিছু হবে। প্রকাশক মিজানুর রহমান বলেন, প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে। আশা করি যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। কাগজসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় এবার আমরা কিছুটা শঙ্কিত। বইয়ের দামও অনেক বাড়বে। তবে এবার স্টল বিন্যাসটা ভালো হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারির আগেই সব আয়োজন সম্পন্ন করে মেলার শুরু থেকেই নতুন বই পাঠকদের হাতে তুলে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চয়ন প্রকাশনের প্রকাশক ওয়াসীম হক। অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলার প্রস্তুতি প্রায় ৮০ ভাগ শেষ। স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণ কাজ চলছে। মেলায় বাংলা একাডেমি অংশে মূল মঞ্চ থাকবে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সবচেয়ে বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরূল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এর আগে বইমেলার সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালোই আছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু আমাদের পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে। বইমেলার জন্য একটা নীতিমালা আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের সেই নীতিমালা মানতে হবে। যদি কেউ নীতিমালার বাইরে যায়, তাদের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এবারের বইমেলা শেষে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এর বাইরে ২০২৩ সালে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।