পবার সংবাদ সম্মেলন
ঢাকা-পার্শ্ববর্তী এলাকার বাতাস দুর্যোগপূর্ণ
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহানগর ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাতাস ক্রমেই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। নগরবাসী আক্রান্ত হচ্ছে নানা মাত্রার বিভিন্ন অসুস্থতায়। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার ‘ঢাকার বিপজ্জনক বায়ুদূষণ রোধে আশু করণীয়’ শিরোনামে দেশের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন পবা (পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সঞ্চালনা করেন জনউদ্যোগের জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের পরামর্শক আজিজুর রহমান খান আসাদ এবং পরিবেশ আন্দোলনের অন্য নেতারা।
বায়ুমানের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর দূষিততম চারটি নগরীর একটি। গত জানুয়ারির বেশ কয়েক দিন ঢাকা বায়ুদূষিত নগরীর ১ নম্বরে অবস্থান করেছে। অ্যায়ারভিস্যুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম ২৪ দিনের মধ্যে ২৩ দিন ঢাকার বায়ুমান বিপজ্জনক পর্যায়ে ছিল। বায়ুমান পরিমাপের একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হছে ‘একিউআই’ (Air Quality Index)। বায়ুমানের সূচক বা একিউআই ০-৫০ হচ্ছে ভালো বা স্বাস্থ্যকর, ৫১-১০০ হলো মধ্যম মানের, ১০১-১৫০ হচ্ছে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১-২০০ হচ্ছে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ৩০১+ হচ্ছে বিপজ্জনক। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাতাসের সর্বোচ্চ মান ছিল একিউআই ৬৩৫ (AccuWeather)।
দূষিত বায়ুতে বাস করলে তাৎক্ষণিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হতে পারে। এর মধ্যে হাঁচি-কাশি, নাকের অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস, শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণ থেকে শুরু করে তীব্র প্রাণঘাতী নিউমোনিয়া, টিবি, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ হতে পারে। উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কিডনি ও লিভারের অকার্যকারিতা, বন্ধ্যত্ব, গর্ভপাত, শিশুর বিকাশ সমস্যা, স্বল্প ওজনের বাচ্চা প্রসব, অকাল প্রসব, গর্ভস্থ শিশুর বিকলাঙ্গতাসহ আরও নানা রোগ সৃষ্টির সঙ্গে বায়ুদূষণের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্তি রয়েছে।
দূষিত বাতাসে থাকলে দুর্বলতা বোধ হয়, মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, চারপাশের মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এসবের ফলে ব্যক্তিত্বের বিশৃঙ্খলা বা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার তৈরি হয়। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে অন্য প্রাণীকূল, উদ্ভিদসহ প্রাণচক্রের প্রতিটি সদস্য কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ বায়ুদূষণের জন্য পুরো বাস্তুসংস্থানতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বায়ুমান বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হলে সবাইকে ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দেন।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্ট ১২ দফা নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ১২ দফা নির্দেশনার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন উপস্থিত বক্তারা।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের নগর ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি মানুষ ধারণ করেছে। নির্মাণাধীন ভবন থেকে ধুলাবালি ছড়াচ্ছে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও এর থেকে ভিন্ন নয়। এদের মাধ্যমে বায়ু দূষিত হচ্ছে। বড় শহরগুলোয় দূষণ রোধ করতে হলে সবুজায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি ইটভাটার আশপাশ এলাকাগুলোয় যদি গ্রিনবেল্ট করা হতো, তাহলে ভাটার দূষণ থেকে আমরা কিছুটা নিরাপদ থাকতে পারব। শহরের বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য যে গ্রিন বেল্ট করা প্রয়োজন, এমন কোনো পরিকল্পনাই আমাদের নেই।’
এ সময় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকে। এই সময়ে পানি ছিটানো (ওয়াটার থেরাপি) বা আর্টিফিসিয়াল রেইনের ব্যবস্থা করতে হবে।’