ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বোয়ালিয়া খালের জমি অধিগ্রহণ

জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে অর্থ অপচয়ের মহোৎসব

জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে অর্থ অপচয়ের মহোৎসব

ঢাকার কুড়িল-পূর্বাচল ৩০০ ফিটের বালু নদী হতে বোয়ালিয়া খাল উৎপত্তি হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে গিয়ে শেষ হয়েছে। যা সিএস, আরএস এবং ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে। এরপরও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বোয়ালিয়া খালের শাখা বাঁকা ও চওড়া করে নতুনভাবে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে। এতে প্রায় শত কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যা জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজে আসবে না। গতকাল বুধবার সরেজমিন বোয়ালিয়া খাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, কুড়িল-পূর্বাচল ৩০০ ফিট প্রশস্ত এক্সপ্রেস সড়কে বোয়ালিয়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ থেকে খালটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে গিয়ে শেষ হয়েছে। ওই খালটি আগের মতোই রয়েছে।

বোয়ালিয়া খালের বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, ১৯৬০ সালে খাদ্যের বিনিময়ে কর্মসূচির মাধ্যমে বোয়ালিয়া খালটি কাটা হয়েছিল। এতে জমিতে সেচের পানি দেয়া সুবিধা হয়। এই খালের মাধ্যমে উত্তর-দক্ষিণের কৃষকরা বেশি উপকৃত হয়। অন্য এলাকায় খাল ভরাট করা হলেও এখনো আগের মতোই রয়েছে বোয়ালিয়া খাল। খাল সম্প্রসারণ করতে হলে ৩২টি প্লট অধিগ্রহণ করতে হবে। বোয়ালিয়া খাল খনন প্রকল্প বর্ধিত করলে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আবু হুরায়রা বলেন, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী বোয়ালিয়া খাল বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন বনরূপা আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয়ে কিছুটা দক্ষিণে এসে পূর্বদিকে গিয়ে বড়ুয়া মৌজার সামান্য উত্তর, উত্তর-পূর্বদিক হয়ে তলনার কাছাকাছি এসে বালু নদীতে মিশেছে। এতে বর্তমানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার উদ্বৃত্ত পানি ও বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ড্রেনের মাধ্যমে দক্ষিণে ভাটারা-কাঁঠালদিয়া খালে পড়ছে। সমগ্র বসুন্ধরা এলাকার উদ্ধৃত্ত ও বৃষ্টির পানি প্রবাহে ভিতরের খালগুলো যথেষ্ট। পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্যে বেশকিছু কৃত্রিম খাল খনন করা হয়েছে। পরিবেশগত ও ভৌগলিক তথ্য পরিষেবা কেন্দ্রের (সিইজিআইএস) জরিপে বোয়ালিয়া খালের কথা বলা হয়েছে। বড়ুয়া মৌজায় পূর্বদিক দিয়ে ৩০০ ফিট সড়কে অতিক্রম করে ডুমনী খাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে দক্ষিণে কাঁঠালদিয়া খালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় উত্তরের পানি বসুন্ধরার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডুমনী খালটি বর্তমানে প্রশস্ত করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় বোয়ালিয়া খালের ক্ষুদ্র অংশটিকে প্রশস্ত ও আকার পরিবর্তন করার পরিকল্পনা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। কারণ বোয়ালিয়া খালের আকার পরিবর্তনের ফলে পানি নিষ্কাশনে খুব একটা সফলতা আসবে না। অথচ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। আর যেসব জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেগুলো ইতোমধ্যেই আবাসিক প্লট হিসেবে গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু প্লটে বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সেক্ষেত্রে খাল খননের জন্য জমি অধিগ্রহণ করলে প্লটের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এসব মানুষের মধ্যে সামাজিকভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় শত কোটি টাকার অপচয় হবে। সেজন্য বোয়ালিয়া খাল সম্প্রসারণ বন্ধে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, রাজউক ও নগর পরিকল্পনাবিদের বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, কুড়িল-পূর্বাচল এলাকায় বোয়ালিয়া খালের ওপর ব্রিজ ও ৩০০ ফিট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বোয়ালিয়া খালের পানি প্রবাহ আগের মতোই রয়েছে। এরপরও খালটি খননে নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা খাল কিংবা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হবে না। জমি অধিগ্রহণ করে খাল খনন করতে গেলে প্রায় শতকোটি টাকা খরচ হবে। এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের কোনো বাস্তবায়ন হবে না। বরং খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এডি-৮, বোয়ালিয়া ও যুমনী খাল খনন কার্যক্রমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে পানি নিষ্কাশনসসহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত