পে স্কেল স্থগিত রাখা সংক্রান্ত জাতীয়করণ করা প্রায় ৪৯ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের উত্তোলিত টাইম স্কেল সমস্যা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্রটি বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হবে এবং আগামী ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানান শিক্ষক সমিতির নেতারা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে সমাবেশ থেকে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এসব দাবি জানান প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের তিন দফা হলোÑ অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্র বাতিল করতে হবে, জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের গেজেট অনুসারে কার্যকর চাকরিকাল (৫০%) গণনা করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে এবং এসএমসি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের নামের গেজেট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে দেশে টাইমস্কেল চালু হলে বেসরকারি চাকরির ৫০ শতাংশ ও সরকারি চাকরির ১০০ শতাংশ ধরে চাকরিকাল গণনা করে বকেয়া টাইমস্কেল প্রাপ্য হয়েছেন। সেই সময়ের বিধিবিধানগুলো দেশে প্রচলিত আছে এবং কোনো প্রকার পরিবর্তন হয়নি। আর দেশের প্রচলিত বিধিবিধান দ্বারা ২০১৩ সালের বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। ওই বিধিবিধানের আলোকে জাতীয়করণ করা ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক তাদের টাইম স্কেল উত্তোলন করেছেন এবং ফেরত প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি জাতীয়করণ করা প্রাথমিক শিক্ষকরা বেসরকারি চাকরির ৫০ শতাংশ চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল পাবে নাÑ এমন কোনো পরিপত্র বা গেজেট কেউ দেখাতে পারবে না। এ অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অন্যায়ভাবে জারি করা পত্রটি প্রত্যাহার করা একান্ত প্রয়োজন। জাতীয়করণ করা প্রাথমিক শিক্ষকরা অপ্রত্যাশিত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর প্রাথমিক শিক্ষা এর মূলভিত্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৬ হাজার ১৬৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত ১ লাখ ০৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, অধিগ্রহণ করা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ বিধি (৯) উপবিধি (১) এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেমন অধিগ্রহণ করা শিক্ষকদের উল্লেখিত বিধি অনুযায়ী কার্যকর (৫০%) চাকরিকালের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ, পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড এবং প্রযোজ্য টাইমস্কেল প্রাপ্য হয়ে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির মহাসচিব রাধা রাণী ভৌমিক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন খোন্দকার, সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, মো. মোশাররফ হোসেন, আজমল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।