দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামে হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া এবং মেহের আলির চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। দুবলার চর মূলত জেলে পল্লি। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি তৈরির কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে বহু জেলে চার মাসের জন্য ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে তোলে সেখানে। জেলেপাড়ার মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, অভাব-অভিযোগ যা কিনা প্রাকৃতিগতভাবে সেই জীবনধারায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যা এখানে প্রতিনিয়ত চিত্রিত হচ্ছে। সারি সারি মাছ ধরা নৌকা। ছবি তোলায় নেই কোন বাধা। কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে সজিব দাস নামে খুলনার বটিয়াঘাটার একজন বাসিন্দা জানালেন পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসেছেন দুই মাস। চার মাসের ছেলের সঙ্গে আবার দেখা হবে হয়তো আগামী মাসে। এভাবে জীবনযাপন সম্পর্কে তিনি বললেন, ঘরে বসে থাকলে তো সংসার চলে না। সমুদ্র আর বন থেকেই আসে জীবন জীবীকার রসদ। খারাপ লাগলে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। এখানে টেলিটকের নেটওয়ার্ক কাজ করে। তাই যোগাযোগে সমস্যা হয় না। চলে আসার আগে ‘ছবি ফেইসবুকে দেয়ার অনুরোধ করলেন। ফিরে আসতে আসতে দেখলাম সজিবসহ দলবল আবারো মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুবলার চরের জেলেরা এখনো দাদন নিয়ে ব্যবসার কষাঘাতে জর্জরিত। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে ভাগ্যের পরিবর্তনের প্রত্যাশায় থাকে এসব জেলে।
লেখক: জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব