বিআরটিসির চেয়ারম্যানের দুই বছর পূর্তি : অনন্য উচ্চতায় বিআরটিসি

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. তাজুল ইসলাম গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনে (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মানিত সচিবের প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় ‘আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন’ এই ব্রত নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। তারই হাত ধরে এক সময়ের জরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি আজ সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। কিংবদন্তী হওয়ার জন্য কারো স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না, তার অদম্য ইচ্ছা এবং কর্মই তাকে কিংবদন্তী হিসেবে গড়ে তোলে। বিআরটিসি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহণ সংস্থা এবং এর কর্ম পরিবেশ দেশের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শত প্রতিকূল পরিবেশ থাকা অবস্থায় এবং নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে সততা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে জরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা যায় বর্তমান চেয়ারম্যান তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) এর চেয়ারম্যান জনাব মো. তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) মহোদয়ের সময়োপযোগী ও সূক্ষ্ম দিকনির্দেশনা এবং সঠিক নেতৃত্বে গত ০৭/০২/২০২১ হতে ০৬/০২/২০২৩ পর্যন্ত বিআরটিসি’র অর্জনসমূহ ঃ

বর্তমানে প্রধান কার্যালয়সহ ডিপো/ইউনিটের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ভাতা নিজস্ব আয় হতে প্রতি মাসের ১ তারিখে পরিশোধ করা হচ্ছে। বর্তমানে (০৩) মাস অন্তর অন্তর গ্র্যাচুইটি সিপিএফ ও ছুটি নগদায়নের টাকা অনলাইনে পরিশোধ করা হচ্ছে। গত ২ বছরে সিপি ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এবং ছুটি নগদায়ন বাবদ ১১৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মোট ৩৭,৫৮,৮৮,৯৩৪ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান যোগদানের পূর্ববর্তী সময়ের বকেয়া বেতন বাবদ ২ বছরে মোট ৯,৬৮,৭০,৬৬৩ টাকা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্ব-স্ব ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে। কল্যাণ তহবিল নীতিমালা ২০২২ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২২ সালে কল্যাণ তহবিল ও শিক্ষা সহায়তা তহবিল খাতে মোট ১৮৪ জনকে ৩৯,৩৮,০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। সাফ জয়ী নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের বরণের জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিজস্ব দক্ষ কারিগর দ্বারা ছাদ খোলা বাস প্রস্তুত করা হয়, যা বর্তমান চেয়ারম্যান, বিআরটিসি’র যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বিআরটিসি’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৪৭৯৪ জন ও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬৯৬২ জন নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

BRTC-SEIP প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১০৫৮৩ জন ও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫৭৪৯ জন নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

বর্তমানে বিভিন্ন পদে মোট ৭৪০ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পদে ১৩৮ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। চেয়ারম্যান মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনায় অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ২৬৭ জন চালক-সি’কে চালক-বি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বিআরটিসি’র ১০টি বাসে প্রাথমিক ভাবে চালকদের জন্য ফ্যাটিগ সতর্কীকরণ ডিভাইস সংযোজন করা হয়েছে। প্রথমবারের মত দপ্তর/সংস্থা প্রধান হিসেবে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে চেয়ারম্যান, বিআরটিসি শুদ্ধাচার পুরুস্কার পেয়েছেন।

২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (APA) তে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থারসমূহের মধ্যে বিআরটিসি ১ম স্থান অর্জন করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ বঙ্গের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২১টি জেলার ২৩টি রুটে ৬০টি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিআরটিসি’র পর্ষদ গঠন ও কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে। বর্তমান গাড়ির নম্বর অনুসারে মেরামত বাজেট প্রদান করা হয় এবং যথাযথ ভাবে মনিটরিং করা হয়। পুরাতন গাড়ি নিলাম বিক্রয়ের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১ বছরে ২টি লটে ২৯৪টি বাস নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০৬টি গাড়ি ভারী মেরামত করে বিআরটিসির গাড়ি বহরে সংযুক্ত করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে যা দ্বারা ভারী মেরামতের কার্যক্রম চলমান আছে। বর্তমানে কারিগর নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসি’র গাজীপুর কেন্দ্রীয়? মেরামত কারখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

বর্তমানে বিআরটিসি’র বহরে সচল বাস সংখ্যা প্রায় ১৩৫০টি। আরো নতুন কিছু গাড়ি বিআরটিসি’র বহরে শীঘ্রই যুক্ত হবে।

বিআরটিসি’র বিভিন্ন বাস ডিপোতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পেট্রোল পাম্পগুলো সচল করা হয়েছে। যার ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ও জ্বালানী খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে ১৯১টি এসি বাসে আনলিমিটে ডরভর সুবিধা চালু করা হয়েছে।

বর্তমানে ১২০০+ গাড়িতে VTS (Vehicle Tracking System) প্রক্রিয়ার সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ৬টি ডিপোতে বিআরটিসি ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিআরটিসি’র সকল ডিপোতে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট অটোমেন সিষ্টেম এর ফলে বাস ও ট্রাকের আয়-ব্যয়, যন্ত্রাংশ, জ্বালানীসহ সকল কার্যক্রম অনলাইন ও অফলাইনে মনিটরিং করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে বিআরটিসিতে ইনহাউজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে শুদ্ধাচার, এপিএ, তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, জিআরএস, ই-গভর্ণ্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা, কম্পিউটার অপারেটরদের ওরিয়েন্টেশন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এ যাবত বিভিন্ন বিষয়ে ৪২টি প্রশিক্ষণে ১৪২০জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসি কর্তৃক নিয়মিত ত্রৈমাসিক সমাচার ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি ডিপো/ইউনিটে আইসিটি সেল গঠন করা হয়েছে।

বর্তমানে ৮৫% কাজ ই-ফাইলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ভর্তি ও ফি অনলাইনে প্রদান করেছে এবং সিমুলেটর সংযোজন করে আধুনিক করা হয়েছে। বর্তমানে যাত্রী সেবা প্রদানের জন্য ‘আমাদের বিআরটিসি’ নামক মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে যার দ্বারা জনসাধারণ/ব্যবহারকারী বাসের সঠিক সময় এবং অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।

বর্তমানে প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক প্রধান কার্যালয় হতে মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্তমানে বিআরটিসি’র প্রধান কার্যালয়সহ সকল ডিপো/ইউনিটে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ১১টি রুটে ই-টিকেটিং ও ০৩টি রুটে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রধান কার্যালয় ও ডিপো/ইউনিটগুলোতে অপেক্ষাগারসহ অন্যান্য স্থাপনাসমূহ দৃষ্টি নন্দন করা হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়সহ প্রত্যেক ডিপো/ইউনিটে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সভা কক্ষ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মতিঝিল বাস ডিপোতে একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের কাউন্টার নির্মাণ করা হয়েছে যা অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন। যাত্রী সেবা প্রদানের জন্য “আমাদের বিআরটিসি” নামক একটি এ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ এ্যাপ এর মাধ্যমে জনসাধারণ/সেবাগ্রহনকারী মোবাইল ও ওয়েব ব্রাউজিং এর মাধ্যমে বাসের রুট, সঠিক সময় ও অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে। বর্তমান চেয়ারম্যান এর যুগোপযোগী ও বহুমুখী সিদ্ধান্তের ফলে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক গতি সঞ্চারিত হয়েছে। বর্তমানে ৪টি প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট ও ২০টি ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে বিআরটিসি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। SEIP প্রকল্পের মাধ্যমে TOT এর আওতায় ১৪২০ জন প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিআরটিসি’র সকল ডিপো/ইউনিটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয় হতে ডিপো হালকা মেরামত, ভারী মেরামত ও নিরাপত্তাসহ সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।

প্রধান কার্যালয়সহ সকল ডিপো/ইউনিটের কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ প্রদান করা হয়েছে এবং উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ডিপো/ইউনিটের অফিস এ্যাডমিনদের ওয়েবসাইট সংক্রান্ত, এপিএএমএস সফটওয়্যার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩ এ আগত দর্শনার্থীদের নিরাপদে মেলায় যাতায়াতের সফল পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব টিপু মুন্সী মহোদয়ের নিকট হতে স্বীকৃতি স্মারক গ্রহণ করেন বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব)।

লেখক : মোহাম্মদ সাইদুর রহমান (উপসচিব) সচিব, বিআরটিসি