গতকাল সোমবার ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাবেক এমপি রেজা আলী মৃত্যুবরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ১৯৪০ সালের ১০ এপ্রিল জন্ম নেয়া রেজা আলী, প্রায়াত টি. আলী (কসবা) এবং প্রয়াত সারাহ আলীর (সিলেট) বড় সন্তান। তার পিতা টি. আলী কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী, মিশরে নিযুক্ত অ্যাম্বাসেডর ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রেজা আলী সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল, ঢাকা; আইচিসন কলেজ, লাহোর; এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে উত্তীর্ণ হন এবং সুপ্রিমকোর্ট বারের সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৬০ সালে স্বৈরাচারি শাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করার কারণে তাকে কারাবন্দি করা হয়। ১৯৬৮ সালে বিটপী অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের সূচনা করেন বাংলাদেশের অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রির পথপ্রদর্শক রেজা আলী। তার মায়া বড়ি, রাজা এবং ওরস্যালাইনের ক্যাম্পেইন সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য খাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখেছে। তার অন্যান্য ক্যাম্পেইন যেমন বাটা, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, কোকাকোলা, রেকিট বেনকিজার, গ্রামীণফোন এবং অগুনতি ব্র্যান্ডের কাজ সাংস্কৃতিক লোকগাথার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে তিনি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী এবং তাদের পরিবারকে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য ও রাজাকারদের হাত থেকে বাঁচাতে বর্ডার পার করিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে, ১৯৮৪ সালে তিনি মিসামি গার্মেন্টস শুরু করেন যা সময়ের সঙ্গে বিশ্বমানের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়। পৃথিবীর দুটি সর্বোচ্চ LEED সার্টিফাইড ফ্যাক্টরিও তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রির শুরুর লগ্নে তার অবদান অসামান্য। পাশাপাশি বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট তিনি। রেজা আলী নিজের নির্বাচনি এলাকা ত্রিশাল, ময়মনসিংহে রেমি ফার্মস প্রতিষ্ঠা করেন এবং তুমুল জনসমর্থন নিয়ে সেখান থেকে জাতীয় সংসদের একজন সাংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আফ্রিকা কিংবা হিমালয়ের পাহাড়চূড়া আরোহণ; জীবনের প্রতি সংরাগ ও উৎসাহ কখনো হারাননি তিনি। মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রী প্রফেসর (অবসরপ্রাপ্ত) নাইমা আলী; ভাই মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সাদেক আলী, সাবেক অ্যাম্বাসেডর ড. তৌফিক আলী, পাশা আলী; সন্তান মিরান, সারাহ এবং মিশাল; ও তার নাতি-নাতনি তারেশ, রিশান, ইরাজ, আলেহান্দ্রো এবং বহু গুণগ্রাহী রেখে যান। আজ বাদ জোহর, মসজিদ আল-ফালাহ, ২২ বিডেফোর্ড রোড, সিঙ্গাপুর, ২২৯৯২৩-এ তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আগামী কাল বাদ জোহর, গুলশান আজাদ মসজিদে। তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ আসর কাল বসুন্ধরা আ/এ কেন্দ্রীয় মসজিদ, ব্লক-ডি, রোড-৪ (মুফতি আবদুর রহমান রোড)-এ। আগামী বৃহস্পতিবার ত্রিশালের নজরুল একাডেমিতে বাদ জোহর, তার চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে বাদ আসর, ত্রিশালে পঞ্চম জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থান রেমি ফার্মস, ধনিখোলা, ত্রিশালে তাকে দাফন করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। পৃথক বার্তায় তারা মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।