‘ভিক্ষা নেব না, আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই’
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘রাজস্ব আহরণের জায়গাটাও তৈরি করতে হবে। কারও দিকে তাকিয়ে থাকবো না, কারো ভিক্ষা নেব না। দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে চাইলে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।’
গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চীন ও ভারত আজ রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনে। তারা এই দরকষাকষির সক্ষমতা অর্জন করেছে। কেউ তাদের হুমকি দিতে পারে না, ভয় দেখাতে পারে না; সে উল্টা ভয় দেখায়। আত্মনির্ভরশীল ও সক্ষম জাতি হওয়ায় তারা এটা করতে পারে। আমরা এরূপ কিছু করতে গেলে, নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসে। আমরা কি এমন জাতি হয়ে থাকব নাকি? আমরা সে দেশ হয়ে থাকতে চাই না। সেজন্য আমাদের রাজস্ব আহরণ করা দরকার।
ভারতের উদাহরণ তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯৬ সালে ভারতের রাষ্ট্রদূতের নাকবোচা অ্যাম্বাসেডর গাড়ি ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি। তখন মন্ত্রী হোক কিংবা আমলারাও সেই নাকবোচা অ্যাম্বাসেডর গাড়ি চালাতেন। এর বাইরে কিছু দেখা যেত না। সেটা ছিল তখনকার কথা। এখন ভারত কোথায়? তারা এটা শুরু করেছিল সেই নেহেরুর সময় থেকেই। আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমাকে রাজস্ব আহরণের জায়গাটাও তৈরি করতে হবে। প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে আমরা এগিয়ে যেতে চাইলে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। কারও দিকে তাকিয়ে থাকব না, কারো ভিক্ষা নেব না।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে আস্তে আস্তে মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যার যার অবস্থান থেকে আমাদের এতে সহযোগিতা করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের কোনো বিকল্প নেই। অনেক কিছুই ত্যাগ করার মানসিকতা থাকা দরকার।
আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইমাম শাহিন বলেন, বিমা আইনে জীবন বিমা পলিসির প্রিমিয়ামের কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। আবার এককভাবে স্বাস্থ্য বিমা করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু কোনো বিমা গ্রহীতা জীবন বিমার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বিমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বিমার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে, এর ওপর ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
কোম্পানি শেয়ারের লভ্যাংশ থেকে উৎস কর কর্তনের বিধান বাতিল করা, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, জিরো কুপন বন্ডের অন্য বন্ডের আয়কে কর অব্যাহতি দেয়া ও ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়া নির্দিষ্ট হারে কর দেয়া সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলার বিধানটি ফের চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট হার ২৫ শতাংশ করা, পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন।
করপোরেট করের হার ৩৭ দশমিক ৫ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস। সেই সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ হার ২০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হারের পার্থক্য সাড়ে ৭ শতাংশ। এই হার সাড়ে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। এছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে বর্তমানে ০ দশমিক ০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। সেখান থেকে কমিয়ে ০ দশমিক ০১৫ শতাংশ করতে চায় ডিএসই। আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ওমর ফারুক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাত্বিক আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।