দাওয়াত নেই, পত্র নেই তবুও বসেছে সাধুর হাট
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
কোনো দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও এক উদাসি টানে মানুষ ছুটে এসেছেন দলে দলে, হাজারে হাজার। যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম, নানা বর্ণের মানুষের। কেউ এসেছেন ধবধবে সাদা পোশাকে, আবার কেউ গেরুয়া বসনে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ‘বাড়ির পাশে আরশী নগর, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, সত্য বল সুপথে চল, এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’ এরকম অসংখ্য লালন সংগীতের সুরের মূর্ছনায় তারা মাতিয়ে তুলেছেন বাউলধাম।
লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেন গানে গানে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে সুর মেলাতে ভুল করছেন না ভক্তরাও। লালন সাঁইজি জীবিত থাকাকালে ফাল্গুন মাসের শেষে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কালী নদীর তীরে শিষ্যদের নিয়ে রাতভর গান-বাজনা ও তত্ত্ব আলোচনা করতেন, যা কালক্রমে পরিণত হয়েছে লালন স্মরণোৎসবে। দূর-দূরান্ত থেকে সাদা বসনে বাউল সাধকরা এসেছেন দলে দলে একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি, প্রেমজুড়ি, চাকতি, খমক হাতে। ক্ষণে ক্ষণেই খণ্ড খণ্ড মজমা থেকে নৃত্যসঙ্গীতের তালে তালে ছলকে উঠছে যেন উত্তাল ভাববাদী ঢেউ। কেউ শুধু লুঙ্গি পরে নাচছেন, গাইছেন। কারো উদোম গা। গলায় বিচিত্র বর্ণ ও আকারের পাথরের মালা। হাতে বিশেষ ধরনের লাঠি ও বাদ্যযন্ত্র। লালন ধামের ভেতর ও বাইরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা করে নিয়ে গান-বাজনা করছেন তারা। বিচিত্র সব বাদ্যযন্ত্রে তুলছেন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লালনগীতি। আখড়ার একটি দল থামছে তো অন্যটি জমিয়ে রাখছে চারপাশ।
তিন দিনব্যাপী বাউল স¤্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালি) আসনের এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালি) আসনের এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের এমপি আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ, কুষ্টিয়া জজ আদালতের পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়ার আহ্বায়ক ডা. এসএম মুস্তানজিদ, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।