সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল এলাকা
তিনজনের মৃত্যু, আহত ১৫
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
রাজধানীর সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল পুরো এলাকা। কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন নয়, কেঁপে উঠেছিল আশপাশের বহু ভবন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিস্ফোরণটি অনেক শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনায় এরইমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের পর তাদের পপুলার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখানেই তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- শফিকুজ্জামান (৪৫), আব্দুল মান্নান (৬৫) ও তুষার (৩৫)। এছাড়াও ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে প্রিয়াঙ্গন শপিং মলের পাশের ভবনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, রোববার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সায়েন্সল্যাবের একটি ভবনের তিন তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভবনটির তৃতীয় তলায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিসটিতে মূলত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, পাশের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনও কেঁপে ওঠে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভবনটির বাসিন্দারা।
ভবনটির সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল কাদির বলেন, বিস্ফোরণের সময় ভবনের গেটে একটি চেয়ারে বসেছিলাম। বিস্ফোরণে ভবনসহ আমার চেয়ার কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে নিচে নামতে থাকেন। পরে বের হয়ে দেখি তিন তলা ভবনটির সামনে মানুষজন পড়ে আছে আর ভেতরে সবকিছু চুরমার হয়ে গেছে।
বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন ভবনটির পাশের মার্কেট প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের দোকানিরাও। তাদের একজন মো. সানাউল্লাাহ ভুঁইয়া। প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে তার কসমেটিকসের দোকান আছে। তিনি বলেন, আমি তখন মার্কেটে আমাদের দোকানে বসে নাশতা করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে চারিদিক কেঁপে ওঠে। পরে দৌড়ে মার্কেটের ভেতর থেকে বের হই। দেখি শিরিন ম্যানশনের তিনতলা উড়ে গেছে। নিচে ৪-৫ জন মানুষ পড়ে আছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে দেখে মনে হয়েছে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পরে কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিস্ফোরণ এত জোরে হয়েছিল যে কী বলব, মাথার মধ্যে এখনো সেই শব্দ ঘুরছে।
ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। পরে একে একে আসে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সিআইডির ক্রাইম সিন, পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যরা। তারা প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ জানার চেষ্টা করছেন। তদন্তকারী দলগুলো বলছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। তবে এটি দুর্ঘটনা, নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বিল্ডিংয়ের অবস্থা এখন পর্যন্ত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির তিনতলায় ছোট ছোট কয়েকটি অফিস ছিল এবং একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস ছিল। যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমি মনে করি এ মুহূর্তে ভবনটিতে কারো প্রবেশ করা উচিত হবে না। ঝুঁকি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ বলা যাচ্ছে না। চারটি কারণে এখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। শর্টসার্কিট, জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও এসি থেকেও বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে সঠিক কারণটি বলা যাচ্ছে না। সঠিক কারণ তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে।
হতাহতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পপুলার হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে আহত ১২ থেকে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪-৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ধারণা করছে সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণটি রাজধানীর মগবাজারের গ্যাস বিস্ফোরণের মতো ঘটনা হতে পারে। গতকাল রোববার সায়েন্সল্যাবের বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান রহমত উল্লাহ চৌধুরী।
২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জনের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে আশপাশের এলাকা কেঁপে উঠেছিল। আশাপাশের বেশ কয়েকটি ভবনের জানালার কাঁচও ভেঙে যায়।