বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবের তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়েছে গতকাল সকালে। সাধুদের ভাবের হাট ভেঙে যাওয়ার পর ভক্তরা চলে যেতে থাকেন আপন ঠিকানায়। তবে যাওয়ার আগে একে অপরের সাথে ভাব বিনিময়, ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন সেই সঙ্গে বিদায়ের বেদনা-কষ্ট নিয়ে বাউলরা ফিরে যান যার যার গন্তব্যে। তারা সাঁইকে ভক্তি দিয়েছেন তিন দিন তিন রাত। পরস্পকে জ্ঞান দিয়েছেন এবং অর্জনও করেছেন। আসার সময় আনন্দ থাকলেও বিদায়ের বেলায় ছিল প্রশান্তির বেদনা। বিদায় বেলায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন কথা জানালেন বাউল ভক্ত নারী-পুরুষরা। অনেক বাউল, সাধু আখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরো ক’দিন। গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেণি-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাত-পাতের কলহ, সামন্ত নিগ্রহও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠস্বর। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনষ্ক সাধক লালন শ্রেণিহীন শোষণমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। আলোচনা শেষে প্রতিদিনই আখড়াবাড়ীর সামনে কালিগঙ্গা নদী পাড়ে উন্মুক্ত মঞ্চে গভীর রাত অবধি চলে এ দেশের খ্যাতনামা লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভিন, চন্দনা মজুমদার ও শাহনাজ বেলিসহ স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সংগীতানুষ্ঠান।