সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। আক্রান্তদের মধ্যে শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৯ থেকে ২০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব তথ্য জানান। জাহিদ মালেক বলেন, দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। এখনো প্রায় ১৯ থেকে ২০ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে। এমনকি সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতিরোধে সরকার রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগের চিকিৎসা এবং ওষুধসহ সবকিছু বিনামূল্যে দিচ্ছে।
তবে, সরকারের একার পক্ষে এই সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সবাই এগিয়ে এলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের শরীরে টিবি বা যক্ষ্মা আছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ১৫ কোটি মানুষ মারা যায়। যেখানে দরিদ্রতা বেশি সেখানে যক্ষ্মা বা টিবির হারও বেশি। বিশ্বের ৭০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগীর বসবাস মাত্র আট থেকে ১০টি দেশে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। আশার কথা হলো, অতীতের চেয়ে যক্ষ্মা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ২০০২ সালে যেখানে বছরে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যেত। এখন সেটা কমে ৪০ হাজারে নেমেছে। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। এ সময় অনুষ্ঠানটিতে একাধিক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যক্ষ্মা বিষয়ক পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনীয়। আমি বিশ্বাস করি এমন একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্মূলে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা পাওয়া যাবে। এই বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা যক্ষ্মার বিষয়ে তাদের দায়বদ্ধতার কথা জানান। সুবর্ণা মুস্তাফা তার বক্তব্যে শিশুদের যক্ষ্মারোগ নির্মূলে অভিভাবকদের সচেতন করার অঙ্গীকার জানান। আরমা দত্ত এমপি যক্ষ্মা নির্মূলে একটি পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং শিরীন আক্তার, সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি এই বিষয়ে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি জোর দেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত সংসদ সদস্যকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরামর্শে নিজ নিজ এলাকায় যক্ষ্মা নির্মূলের পদক্ষেপকে বেগবান করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে যক্ষ্মারোগ শনাক্তকরণে সক্ষম করেছে। তবে এই বিশাল কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, প্রয়োজন সকলের মিলিত প্রচেষ্টা।