গাইডের ব্যবসা চলবে না তাই নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা
বললেন শিক্ষামন্ত্রী
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কারো কোচিং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেউ কেউ ভাবছেন তাদের নোট-গাইডের ব্যবসা চলবে না। এজন্য নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করা হচ্ছে। ভেতর থেকেও বিরোধিতা চলছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা কিন্তু সেটিও লক্ষ্য রাখছি।
শিক্ষামন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন রিয়াজ।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলব যে, পড়াশোনাটা ভালোভাবে করতেই হবে। মুখস্থ না, শিখে শিখে আত্মস্থ করে এবং সেটা যেন প্রয়োগ করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে, একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে হলে অনেক রকমের কিছু করতে হয়। সেখানে অনেক ঘাটতি থাকতে পারে, অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, এটি চলবে। কেউ কেউ কোথাও কোথাও মনে করছেন তাদের কোচিং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কোচিং ব্যবসা চলবে না। কেউ কেউ ভাবছেন তাদের নোট গাইডের ব্যবসা চলবে না। সেই কারণে অনেকে বিরোধিতা করছেন। আমরা কিন্তু সেটিও লক্ষ্য রাখছি। নতুন কারিকুলাম থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আমাদের শিক্ষার্থীরা ইনশাআল্লাহ জেনে বুঝে শিখে প্রয়োগ করতে শিখে দক্ষ-যোগ্য মানুষ হবে। আমরা অনেক বেশি বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর যেমন জোর দিচ্ছি, একই সঙ্গে মানবিক সৃজনশীল মানুষ হওয়া জরুরি। সেদিকেও আমরা জোর দিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন চিন্তা করতে শেখে, যেন সমস্যার সমাধান করতে শিখে।
তিনি বলেন, এই যে ভাবতে শেখা, এটাকে একটা প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ভয় পায়। যদি ভাবতে শিখে যায় দেশের মানুষ, তাহলে তো আর তাদের মগজ ধোলাই করা যাবে না। কাজেই তাদের অনেক ভয়। এই কারণে অনেক রকমের বিরোধিতা আছে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমাদের এই নতুন শিক্ষাক্রম এগিয়ে যাবে, চলবে।
মন্ত্রী বলেন, একটা কথা একেবারে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই- আওয়ামী লীগ তার জন্ম মুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামবিরোধী বা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো দিন কোনো কিছু করেনি, কোনো দিন করবেও না। কাজেই এই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যে সব মিথ্যাচার, অপপ্রচার হচ্ছে সেগুলো মিথ্যাচার, সেগুলো অপপ্রচার। সেগুলো যারা করছে তারা চূড়ান্ত রকমের ইসলামবিরোধী কাজই করছে। কারণ ইসলাম কখনও মিথ্যাচার, অপপ্রচার, গুজব রটানো এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব, যারা ইসলামের দোহাই দিয়ে এগুলো করছেন তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই দেশটা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়েছিলেন, আমরা সেই দেশটাকে আজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে। এই দেশ আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। যেখানে থাকবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে স্মাট নাগরিক। আর সেই স্মার্ট নাগরিক কিন্তু আপনারাই, আমাদের শিক্ষার্থীরাই। আপনারা স্মার্ট নাগরিক হবেন স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমে। সেই স্মার্ট শিক্ষার ব্যবস্থা করবার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। কাজেই আপনারা সবাই পড়াশোনায় মনোযোগ দেবেন। এর বাইরে যে সহশিক্ষা কার্যকম আছে, সেই কাজে অংশ গ্রহণ করবেন। আমাদের নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য- সব কিছুকে জেনে বুঝে আত্মস্থ করে এর মধ্য থেকে যে অন্তর্নিহিত শক্তি তাকে অনুধাবন করে সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আপনারা একেকজন স্মার্ট নাগরিক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন, এই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সেনার বাংলাদেশে পরিণত করবেন। যে কোন অশুভ শক্তি আসুক না কেন আমরা যেমন একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম সমস্ত অপশক্তিকে প্রতিহত করে, পরাভূত করে। আগামী দিনেও ইনশাআল্লাহ যেকোনো অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করুক না কেন, আমরা তাকে প্রতিহত করে, পরাভূত করে, পরাজিত করে নিশ্চয়ই আমরা জয়ী হবো এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।