মহল বিশেষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

স্বজনদের নিয়ে ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রধান ‘গরু ব্যাপারী আবু ছৈয়দ’

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার গোদারবিল এলাকার ‘কথিত গরু ব্যবসায়ী’ মো. নুরুল আফসার। গত ৩ মার্চ রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানা পুলিশের হাতে তিনি ইয়াবাসহ আটক হন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন।

গ্রেপ্তার মো. নুরুল আফসার টেকনাফের গোদারবিল এলাকার মৃত কাসেমের ছেলে। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে টেকনাফ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি আবু ছৈয়দের মেয়ের জামাতা।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, গত ৩ মার্চ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন শাশুর-জামাতা আবু ছৈয়দ ও নুরুল আফসার। ইয়াবার চালান পাচারের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জামাতা নুরুল আফসারকে গ্রেপ্তার করলেও কৌশলে পালিয়ে যান শ্বশুর আবু ছৈয়দ।

টেকনাফের স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, নুরুল আফসারের বাবা কাশেমের সঙ্গে আবু ছৈয়দের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল আমৃত্যু। কাশেমের মৃত্যুর পর তার ছেলেদের ব্যবসায়িক অংশীদার করেন আবু ছৈয়দ। পরে নুরুল আফসারের সঙ্গে তিনি নিজের মেয়েকে বিয়ে দেন। আর এই ব্যবসায়িক ও আত্মীয়তার সম্পর্কের জাল তৈরির নেপথ্য হিসেবে কাজ করেছে ইয়াবাপাচারের সংশ্লিষ্টতা। গত ৩ মার্চ ঢাকায় ইয়াবাসহ জামাতা গ্রেপ্তারের পর কৌশলে পালিয়ে টেকনাফ ফেরেন আবু ছৈয়দ। আর পুরো বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন।

সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থার তথ্য মতে, এর আগে চট্টগ্রামে বিপুল অংকের ইয়াবার চালান নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আবু ছৈয়দের আপন ভাই ছৈয়দ কাশিম। ওই মামলার বিচার শেষে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন ছৈয়দ কাশিম। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হন।

আবু ছৈয়দ মূলত গরু ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা চোরাচালানের এক আলোচিত গডফাদার। তিনি ছেলে আবদুল্লাহসহ নিকট স্বজনদের নিয়ে গড়ে তোলেন ইয়াবার বিশাল একটি সিন্ডিকেট। আর এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক আবু ছৈয়দ হলেও সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন তার দুই শ্যালক। টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকার সহোদর নুরুল আমিন ও আবদুল আমিনের ইয়াবার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেন তাদের দুলাভাই আবু ছৈয়দ। গত ২০১৯ সালের ফেরুয়ারি মাসে টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণকারি ১০২ জন ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে নুরুল আমিন ও আবদুল আমিন ছিলেন। গত কয়েক মাস আগে ওই মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম নিষ্পত্তির পর দুই সহোদর টেকনাফে অবস্থান করছেন।

এদিকে আবু ছৈয়দের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অর্জিত বিপুল পরিমাণ সম্পদের হিসাবের উৎস সম্পর্কে জানতে ইতিমধ্যে দুদকসহ সরকারি ৩টি সংস্থা অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধানের প্রাথমিক তথ্য মতে, গত ৩ বছর ধরে টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তের করিডোর দিয়ে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। তারপরও গরু ব্যবসার খাত দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অংকের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংক হিসাবে স্বাভাবিক থাকলেও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ওই লেনদেনের তথ্য অস্বাভাবিক বলে ধারণা গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে, আবু ছৈয়দের বিরুদ্ধে টেকনাফের বহিষ্কৃত ওসি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপের ঘুষের টাকা জমা রাখার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রদীপের বিপুল অংকের টাকা এখনো আবু ছৈয়দের কাছে রয়েছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আবু ছৈয়দের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন মতামত। তিনি বলেন, ‘গত ৩ মার্চ তার মেয়ে ও জামাতা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যান। গত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের লোকজন যড়যন্ত্রমূলকভাবে তার জামাতাকে ইয়াবাসহ ধরিয়ে দেয়। ওই সময় মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে না গেলেও আমি ভিন্ন কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। আমি কোনোভাবেই অবৈধ কোনো ব্যবসায় জড়িত নই। নির্বাচন ও ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বি একটি মহল বারবার আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আবু ছৈয়দ বলেন, ‘কথিত ইয়াবা কারবার নিয়ে ভাই কারাগারে, জামাতা আটক, শ্যালক আত্মসমর্পণকারি হলেও তাদের এসব অবৈধ কাজের সঙ্গে তার ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে ব্যবসা নেই, আলাদা ব্যবসা। এসব স্বজনদের অপকর্মের জন্য তিনি কোনোভাবেই দায়ী নয় বলে মন্তব্য করেন’।