দুই শ্রেণির ক্রেতার ভিড় বাড়ছে

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এখন একমাত্র ভরসা ফুটপাত

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ঈদুল ফিতরে ব্যবসা করতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিমিষেই ব্যবসায়ীদের সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই। তবে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও খোলা আকাশের নিচে দোকান বসিয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবাজার মার্কেটে ছাই সরিয়ে এবং সামনের রাস্তায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কাপড় বিক্রি শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের এই অস্থায়ী দোকানগুলোতে প্রথম দিনেই প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। আবার অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ঢাকার বাইরে খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছেন। হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ও বঙ্গবাজারের সামনের রাস্তায় ফুটপাতে টুল পেতে কাপড় সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদের আগে দোকানে নতুন কাপড় তোলার উদ্দেশ্যে বঙ্গবাজারে এসেছেন গাইবান্ধা বোনারপাড়ার ব্যবসায়ী সুজন মণ্ডল। চার-পাঁচটি দোকান ঘুরে তিন লাখ টাকার কাপড় কিনেছেন তিনি। সুজন মণ্ডল বলেন, সাধারণত কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা থেকে মালপত্র কিনি। মাঝে মাঝে বঙ্গবাজার থেকে কিনতাম। মানবিক কারণেই আজকে এখানে আসলাম। ভেবেছিলাম, একই দামে যদি এখান থেকেই মালপত্র পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই কিনব। এরইমধ্যে তিন লাখ টাকার কাপড় কিনেছি।

ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, আমি খুবই সীমিত দামে বিক্রি করলাম। এ সপ্তাহে দাম বাড়লেও পুরোনো দামেই বিক্রি করতে হলো। বঙ্গ ইসলামিয়া কমপ্লেক্সে নাহার গার্মেন্টস নামে একটি দোকানের মালিক মো. সোহেল। তিনি জানান, তার ৩টি গোডাউন ছিল। একটি বঙ্গবাজারের তৃতীয় তলায়, একটি সিদ্দিকবাজারে, আরেকটি বঙ্গ ইসলামিয়া কমপ্লেক্সে।

আমার গোডাউনগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। শুধু সিদ্দিকবাজারের গোডাউন বেঁচে গেছে, বাকি দুটো পুড়ে ছাই। সিদ্দিকবাজারের গোডাউনে বেঁচে যাওয়া মালামাল এনেই বিক্রি করছি। ফুটপাতে বাচ্চাদের শার্ট দেখছিলেন লালবাগ থেকে আসা দুই নারী। জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা শুনেছি পুড়ে যাওয়ার পর এখানে ফুটপাতে দোকান বসেছে। তাই ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে এখান থেকেই কিনতে এসেছি। একই কথা জানান ব্যাংক কর্মচারী রেজাউল কাজী। তিনি বলেন, আমি সাধারণত ঈদে কেনাকাটা করি আমার বাসার কাছে খিলগাঁও ও মৌচাক থেকে। আজ বঙ্গবাজারে এলাম। শার্ট, প্যান্ট, জুতা কিনব। ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত এ কারণেই এখানে এসেছি।

ফুটপাতে বেচাকেনা সম্পর্কে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নূর আলম বলেন, এখানে দুই শ্রেণির ক্রেতা এসেছেন। অনেকেই এসেছেন মানবিক কারণে, অনেকেই এসেছেন সস্তায় জিনিস পাওয়ার আশায়। ফুটপাতে ক্রেতারা অনেক বেশি দামাদামি করছেন। বেশিরভাগ ক্রেতার ধারণা, পোড়া গোডাউন থেকে কাপড়গুলো টেনে নিয়ে আসছি। হয়তো কাপড়ের ইস্ত্রি নষ্ট হয়ে গেছে, ভাঁজ নষ্ট হয়ে গেছে তাই কম দামে পাওয়া যাবে।

দোকানগুলো ঘিরে উৎসব জনতার ভিড় থাকলেও বিক্রি এখনো জমে উঠেনি। তবুও ফুটপাতই এখন ভরসা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এই জায়গা পরিষ্কার করে দিলে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসেও যদি ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেটিই ভালো। পুরোটা তো রিকভার করা যাবে না। কিছুটা যদি রিকভার করা যায়।’ গত শনিবার বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর কথা থাকলেও বসেনি। ধ্বংসস্তূপ থেকে আবর্জনা সরাতে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। গতকাল রোববার বঙ্গবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরিফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বঙ্গবাজারের ফ্লাইওভারের নিচে বসেছেন লেডিস আইটেম নিয়ে। তিনি বলেন, ইসলামিয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় আমার দোকান ছিল। এখন ঈদের বাজার। যদি বসে থাকি কেউ তো আর টাকা দিয়ে যাবে না। তাই যেটুকুই বিক্রি করতে পারি আশা নিয়ে বসেছি।

ফ্লাইওভারের নিচে দোকান নিয়ে বসেছেন বঙ্গ মার্কেটের ব্যবসায়ী রাহিম মিয়াও। তিনি বলেন, আমার দুইটি দোকান ছিল কাঠের মার্কেটে। দুইটি দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যে মালামালগুলো সরাতে পেরেছিলাম এগুলো নিয়ে বসেছি। হাত একেবারে খালি। চলব কী করে। যদি বিক্রি বাড়ে, মাল শেষ হলে আরো নিয়ে আসব।

ব্যবসায়ী সিরাজ তালুকদার বলেন, বঙ্গবাজারের আর্দশ মার্কেটে দুটি দোকান ছিল। দুটিই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনো মালামাল উদ্ধার করতে পারিনি। নতুন করে কিছু মাল কিনে আজকে দোকান নিয়ে বসেছি। এখনো জানাজানি হয়নি। সে কারণে বেচাবিক্রিও কম।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। যা পরে ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গমার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া মহানগর শপিং মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, ইসলামিয়া ও এনেক্সকো টাওয়ারে। কাঠ-টিন-লোহার এই মার্কেটের ধ্বংসাবশেষ অপসারণে কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। তবে এখনো জায়গাটি পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি।