ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল। সেখানে বালি ফেলে ইট বিছানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মুখপাত্র মো. আবু নাছের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদের তত্ত্বাবধানে, করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে অগ্নিকাণ্ডস্থল ব্যবসায়ীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আবু নাছের জানান, প্রস্তুতির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে বালি ফেলে ও ইট বিছানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সেখানে ৪০ গাড়ি বালি ফেলা এবং প্রায় ৯০ হাজার ইট বিছানো হয়েছে। পুরো এলাকায় প্রায় ২.৫ লাখ ইট বিছানো এবং প্রায় ১৫০ গাড়ি বালি ফেলা হবে। আজকের (গতকাল) মধ্যে পুরো এলাকায় বালি ফেলা ও ইট বিছানোর লক্ষ্যে করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, গতকাল সোমবার সকাল থেকে অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. হায়দর আলীর নেতৃত্বে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে এখন পর্যন্ত ১০৬০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ কাজ এখনো চলমান।
ঈদের মার্কেট ধরতে আজ থেকে বসার পরিকল্পনা
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, এখানে আগুনের ঘটনায় ২৯৬১ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো দোকান অক্ষত ছিল না। নিচতলা, দ্বিতীয়তলা, তৃতীয়তলার কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকেই ঈদের বেচাকেনা ধরতে চাই। তিনি বলেন, সেজন্য আমরা অস্থায়ীভাবে চৌকি পদ্ধতিতে দোকান পরিচালনা করব। আমরা ব্যবসায়ীদের বেশি গুরুত্ব দেব। কারণ আমরা মালিক নয়, ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দিতে চাই। এখানে যারা পণ্য বিক্রি করছিলেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ঋণ করে এখানে লগ্নি করেছিলেন। আগুনে সব হারিয়েছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত এখন পর্যন্ত দুই কোটির বেশি টাকা অনুদান ও সাহায্য-সহযোগিতা হিসেবে এসেছে উল্লেখ করে নাজমুল হুদা বলেন, দোকান মালিক বা পজিশন মালিক অথবা বরাদ্দ করা মালিক যেই হোক না কেন, ঈদের আগে আমরা ব্যবসায়ীদেরই গুরুত্ব দিতে চাই। পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদানের বিষয়টি পরে সমন্বয় করা হবে।
বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের হাতাহাতি
ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির অস্থায়ী ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা, কমিটির কার্যক্রম ও এক কমিটিকে বাদ দিয়ে আরেক কমিটির ভারপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। পরিস্থিতি বুঝে তিনি উঠে সরে দাঁড়ান। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ফান্ড রেইজ করার জন্য বলা হয়েছে, আমি সেই চেষ্টাই করছি। সেজন্যই আজ আমার বঙ্গবাজারে যাওয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে আজ খুবই বিরক্ত হয়েছি। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব। তাদের কার্যক্রমে বিরক্ত হয়ে আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছি। তিনি বলেন, কারা ক্ষতিগ্রস্ত, কারা নতুন করে অ্যালটমেন্ট পাবে তা ঠিক করবে সিটি কর্পোরেশন।
হাতাহাতি-হট্টগোলের কারণ জানতে চাইলে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হৃদা বলেন, এখানে আগুনের ঘটনায় ২৯৬১ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো দোকান অক্ষত ছিল না। নিচতলা, দোতলা, তিনতলার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু এখন কেউ কেউ এসে বলা শুরু করল, এখানে নাকি ২৬০০ দোকান। বাকি দোকান নাকি ঘাপলা। এটা শুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। ধাওয়া করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ধরে ধরে খুঁজে বের করে তালিকা করেছি। তালিকায় ২৯৬১ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নাম এসেছে। সেই তালিকা আমরা সিটি কর্পোরেশনকে দিয়েছি। কেউ যদি এখন এখানে এসে হট্টগোল লাগানের চেষ্টা করে, এখানে ষড়যন্ত্র করে তাহলে তো সমস্যা।