বিএনপি তো রাষ্ট্র নিয়েই হতাশ
বললেন তথ্যমন্ত্রী
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি তো রাষ্ট্র নিয়েই হতাশ। ফলে তারা যে, রাষ্ট্রপতি নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করেছে সেটিও অস্বাভাবিক নয়।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা বিএনপি মহাসচিবের ‘নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই’ বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব তো রাষ্ট্র নিয়েই হতাশ। না হয় উনি কি বলতে পারেন ‘পাকিস্তানই ভালো ছিলো’। এ কথা বলার মধ্য দিয়ে এটিই তো প্রকাশ পায় যে, তিনি রাষ্ট্র নিয়েই হতাশ। যারা রাষ্ট্র নিয়ে হতাশ তারা রাষ্ট্রপতি নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু বিদায়ী রাষ্ট্রপতি যেমন ভালো মানুষ ছিলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতিও একজন ভালো মানুষ। এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি একজন বিচক্ষণ, প্রাজ্ঞ, বুদ্ধিমান মানুষ, সংকটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে তিনি অতীতের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত সোমবার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিহাসে একটি নতুন পালক যুক্ত হয়েছে। একজন রাষ্ট্রপতি পরপর দুইবার দায়িত্ব পালন করে সসম্মানে বর্ণাঢ্যভাবে বিদায় নিয়েছেন এবং আরেকজন রাষ্ট্রপতি শপথগ্রহণ করেছেন। মর্যাদার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও বর্ণাঢ্যভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তর গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চার ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক যুক্ত করেছে।’
এ সময় সাংবাদিকরা সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস) যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা হয়েছে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছে। রুয়ান্ডাসহ অন্যান্য যেসব গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, সেসব জায়গায় এত মানুষ মৃত্যুবরণ করেনি। আমাদের সরকার এ নিয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই ঘোষণাটা অত্যন্ত সহায়ক হবে।
পুনঃমুদ্রিত ‘শ্বেতপত্র ১৯৭১’ মোড়ক উন্মোচন : এ দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর পুনঃমুদ্রিত ‘পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ৫ই আগস্ট ১৯৭১ সালে প্রকাশিত পূর্বপাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে শ্বেতপত্র’ প্রকাশনাটির মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়া, পরিচালক মোহাম্মদ আলী সরকার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা, যেটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, হচ্ছে। বিভ্রান্তি দূর করতেও এই প্রকাশনাটি সহায়ক।’
হাছান মাহমুদ উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘শ্বেতপত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধকে পূর্বপাকিস্তানের সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ৭ মার্চ সম্পর্কে লেখা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমান একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার চালানোর কথা ঘোষণা করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি নির্দেশনা জারি করেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই যে পূর্ববাংলায় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছিল সেটি এখানে পরিস্ফুটিত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভারত বলত না সবসময় হিন্দুস্থান বলত। এখানে হিন্দুস্থানের অর্থাৎ ভারতের ভূমিকা নিয়েও একটি অধ্যায় আছে। লেখক, বাগ্মী, সাংবাদিক সবার কাছে বইটি পৌঁছানো প্রয়োজন।’
পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন : লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকা আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, যিনি পদ-পদবির পেছনে ছোটেননি, রাজনীতিকে ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলেন, সেই মানুষটি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। গতকাল বিকালে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভাষাসংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব গণআন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। স্বাধীনতার পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তেমনি তার জীবন ও রাজনৈতিক জীবন থেকে আমাদের অনেক শেখার রয়েছে।