সংবাদ সম্মেলনে সেনা কর্মকর্তা দেলোয়ার

পর্যটন উন্নয়নে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। আরএফ বিল্ডারর্স নামে এক ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। চুক্তি মতো ফ্ল্যাট বুঝে নিতে গিয়ে হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আবেগতাড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেছেন মেজর দেলোয়ার হোসেন খান (অব.)। তিনি ওয়েসিস হোটেল এন্ড রিসোর্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

তিনি বলেন, আরএফ বিল্ডার্স নামে এক কোম্পানির মালিক হাজী দেলোয়ারের সাথে ২০১১ সালে কক্সবাজারে যৌথ ব্যবসার একটি চুক্তি হয়। আমরা উভয়ে মিলে ‘ওয়েসিস হোটেল এন্ড রিসোর্ট’ নামে ৫ তারকা মানের ১৪ তলা বিল্ডিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। যেখানে আমার কোম্পানি বিনিয়োগ করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের জমিতে ভবন নির্মাণে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন ছিল না। আমার কাছে এ তথ্য গোপন করে প্রতারণা করেছেন তিনি।

মেজর দেলোয়ার আরো বলেন, হাজী দেলোয়ারের কথায় আমি পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছি। ৬ মাসের মাথায় আমার মূলধন ফেরত দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু ৫ বছরেও মূলধন ফেরত না পেয়ে আমাদের অন্যান্য প্রকল্পগুলো অর্থাভাবে থমকে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপি এবং প্রচন্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েছে কোম্পানি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ১ জুলাই হাজী দেলোয়ার ‘ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্ট ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে আমার ২০০ রুম ভাড়া চুক্তি হয়। ২০২৮ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদে হোটেলের প্রতিটি রুমের সৌন্দর্য বর্ধনে আমি আরো কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু ফ্লাটের প্রকৃত মালিকদের সাথে আমাকে চুক্তি করিয়ে না দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ভাড়া তুলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এতে আমি যেমন প্রতারিত হচ্ছি তেমনি প্রকৃত ফ্ল্যাট মালিকরাও ভাড়া পাচ্ছেন না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেজর দেলোয়ার বলেন, জীবনের সব উপার্জন আমি কক্সবাজারে বিনিয়োগ করে আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে পথে ঘুরছি। দেলোয়ারের প্রতারণায় আজ আমি সর্বস্বান্ত। তিনি শুধু আমার সাথে প্রতারণা করেছেন এমন নয়, আমার চুক্তির পর জনৈক কুদ্দুস এবং ৩-৪ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সাথে চুক্তি করেন। এরা ছাড়াও আরো দুইজনের সাথে চুক্তি করেন। যা শুধুই প্রতারণা। আমাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে দুবাই বেড়াচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ল্যান্ড ওনার অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম বলেন, আমি জমির মালিক। আমাদের সাথে ৩০-৭০ শতাংশের মালিকানা চুক্তি হয়। অথচ হোটেলে কোনো এক দুর্ঘটনায় হাজী দেলোয়ার আমাকে জড়িয়ে মামলা করেন। পর্যটন শিল্প বিকাশে আমরা জমি দিয়ে এখন মামলার আসামি হচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মেজর দেলোয়ারের শ্যালক হামলার শিকার হলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আমি নিয়ে যাই। মানবিকতার কারণে সহযোগিতা করায় প্রতারক হাজী দেলোয়ার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন।

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্টের মালিক হাজী দেলোয়ার বলেন, ২০১৮ সালে মেজর দেলোয়ারকে চুক্তিতে দুশ ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলাম। চুক্তির পর কয়েক মাস ভাড়া ও ভ্যাট পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করায় তিন কোটি টাকার উপরে ভাড়া ও ভ্যাটের টাকা বকেয়া পড়ে যায়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় আইনি প্রক্রিয়ায় তিনবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে ফ্ল্যাট বুঝে নেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মামলার পর মেজর দেলোয়ার (অব.) সর্বশেষ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান, তার নেতাকর্মী, যুবদলের নেতা ও ধর্ষণ মামলাসহ বিভিন্ন মামলার চিহ্নিত আসামিদের দিয়ে হোটেলে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ফ্ল্যাট দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে করে একদিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অন্যদিকে পর্যটকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।