স্পিড নীতিমালা আসছে শিগগিরই
বললেন সড়ক সচিব
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
শিগগিরই স্পিড নীতিমালা আসছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি বলেছেন, গাড়ির স্পিড কমানো গেলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। এজন্য আমরা একটা গাইডলাইন তৈরির কাজ করছি। আপনারা দ্রুতই একটি স্পিড নীতিমালা পাবেন। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আয়োজিত ‘সড়ক ও যানবাহনের প্রকারভেদে গতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা একটা প্রস্তাবনা করেছিলাম যেখানে শহরের মধ্যে যানবাহনের স্পিড ৩০ কিলোমিটার (ঘণ্টা) করা প্রয়োজন। এটি করার পর মানববন্ধন শুরু হয়ে গেছে। এই গতিকে কীভাবে বাড়ানো হবে, আমি আর এটা নিয়ে কিছু বলছি না। একটু আগেই প্রেজেন্টেশনে দেখা গেল যে, শহরের মধ্যে স্পিড ৩০ থেকে ৩৫ হওয়া উচিত। যখনই একটা যানবাহনের জন্য আমাদের শহরে বলা হলো ৩০ কিলোমিটার করা হবে, তারপরের দিনই মানববন্ধন করে বলা হলো যে, এই গতিসীমা বাড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের বর্তমান বাস্তব অবস্থা। তিনি আরো বলেন, হাইওয়েগুলোতে গতিসীমা ৮০ করা হয়েছে। আমার কাছে কেউ একজন ফোন করে দাবি করেছেন, হাইওয়েতে ৮০ কিলোমিটার বেগে চালানো যায়, এই গতিসীমা ১০০ করে দিন। এগুলোই হচ্ছে আমাদের বর্তমান দাবি। কিন্তু আমি এসবের পক্ষে নই। যেখানে স্পিড বাড়বে সেখানে দুর্ঘটনা বাড়বে। তাই গতিসীমা কমানো উচিত। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। গোলটেবিল বৈঠক থেকে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর এম খালেদ মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। গতিসীমিত বা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সেভাবে পরিকল্পনা করে সড়ক তৈরি করতে হবে। শুধু দুর্ঘটনার জন্য চালককে দোষারোপ করলে হবে না। পথচারী থেকে চালক সবাই যেন বুঝতে পারে এমন রোড সাইন ব্যবহার করতে হবে। নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, পথচারী হিসেবে সবচেয়ে অসহায় বোধ করি এখন। আমার এক বন্ধু সেদিন গুলশানের ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় স্লাব ভেঙে নিচে পড়ে গিয়ে হাঁটু ভেঙে যায়। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না। কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। এছাড়া গাড়ি চিহ্নিত করতে বড় নাম্বার প্লেট স্পষ্ট করে বসাতে হবে এবং রঙের কম্বিনেশন থাকতে হবে যেন দূর থেকেও দেখে বোঝা যায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি সোহেল রানা বলেন, আইন প্রয়োগ করাটাই আমাদের কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট কমাতেই আমাদের ৯৯ শতাংশ সময় ব্যয় করতে হয়, যার ফলে আমরা অন্য বিষয়গুলো ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে সড়ক কম, গাড়ি বেশি। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য দেয়। আসলে আমাদের কাছে প্রোপার ডাটা নেই, যার ফলে আমরা কাজ করতে পারি না। দুর্ঘটনার প্রোপার ডাটা তৈরি করা উচিত। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এই জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনাতে হবে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থা বুঝে আমাদের যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের কোনো এক সড়কে গতিসীমা দিয়ে রাখলাম ৮০ কিলোমিটার, কিন্তু বন্যার সময় সেখানে সে গতিতে চলা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সেখানে ভেরিয়েবল সাইনবোর্ড থাকা জরুরি। তিনি আরো বলেন, আমরা যেগুলো করতে পারি, যেগুলো করা সম্ভব, সেগুলো করতে হবে। হেলমেটের ব্যবহার, অটোমেটিক টোলের ব্যবস্থা করা, সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কেন আমরা করতে পারছি না? এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। স্কুল পর্যায় থেকে আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর কোনো গতিসীমা নির্ধারণ বা নিয়মনীতি করলে তা যেন চালকরা জানতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা অনুষ্ঠানের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন, হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জি, বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) আমজাদ হোসেন, নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন প্রমুখ।