আসামি মুনিরের জবানবন্দি

সাগরে নিহত ১০ জনই ছিল জেলেবেশি ডাকাত

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আরো এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে মামলাটিতে এ পর্যন্ত ৪ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেন।

বৃহস্পতিবার গিয়াস উদ্দিন মুনির নামের আসামি তার প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সাগরে নিহত ১০ জনই জেলেবেশি ডাকাত (জলদস্যু) ছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবেই সাগরে জেলের বেশে নেমেছিলেন ডাকাতি (দস্যুতা) করার উদ্দেশ্যে। যার মধ্যে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলামকে মুনীর সামশু মাঝির ট্রলারে পাঠিয়েছিলেন।

চতুর্থ দফায় আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনির আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস।

তিনি জানান, আসামি মুনির জবানবন্দিতে কি বলেছেন আমি জানি না। তবে রিমান্ডের সময় আসামি মুনিরের প্রদত্ত তথ্যে মামলাটির গতি মোটামুটি একটি জায়গায় এসে থেমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে আরো সময়ের দরকার রয়েছে।

কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ ঘণ্টাব্যাপি আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনিরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ মামলায় গত ২৫ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকা থেকে গিয়াস উদ্দিন মুনিরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মুনির বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে। এর আগে আসামি বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি এবং মাতারবাড়ির কামাল হোসেন ওরফে বাইট্টা কামাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আসামি মুনির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি নিজেও জলদস্যুতায় জড়িত ছিলেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে দস্যুতায় নেই। তিনি বর্তমানে চকরিয়া উপকূলের লবণ মাঠে কাজ করছেন। একজন লবণ চাষির কাছে ৬ মাসের কাজের চুক্তিতে রয়েছেন। রমজান মাসের প্রথম দিকে সোনাদিয়া দ্বীপের জলদস্যু সর্দার সুমন তাকে মোবাইলে বলেছিলেন, সাগরে ঈদের আগে একটি বড় ট্রিপে যেতে হবে। তাতে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।

দস্যু সর্দার সুমনকে তিনি চুক্তিতে লবণ মাঠে কাজ করার কারণে ছুটি না মেলার কথা জানিয়ে চকরিয়ার কোনাখালী এলাকার সাইফুল ইসলামকে (নিহত ১০ জনের একজন) সাগরে নিতে বলেন। যথারীতি গত ৭ এপ্রিল মহেশখালীর নুরুল কবির (নিহত) সাইফুলকে মোবাইলে ডেকে নামবিহীন ট্রলারে তুলে দস্যুতার উদ্দেশ্যে সাগরে নিয়ে যায়। সোনাদিয়া দ্বীপের দস্যু সর্দার সুমন মনিরকে আরো জানিয়েছিল সাগরে লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাদিও করে রাখা হয়েছে।

গত ৯ এপ্রিল নামবিহীন ট্রলারের ১০ জেলে হত্যার পরও দস্যু সর্দার সুমন লবণ মাঠে কর্মরত মুনিরকে মোবাইলে সাগরে সংঘটিত ডাকাতি ও পরবর্তী সময়ের বিষয়াদি নিয়ে কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সাগরে নিহত সামশু মাঝির মালিকানাধীন ট্রলারটি নিয়ে দস্যুতার যাবতীয় আয়োজনের নেপথ্যেও কাজ করেছে সোনাদিয়া দ্বীপের দস্যু সর্দার সুমন। এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, মামলার অন্যতম আসামি সোনাদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা সুমনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরইমধ্যে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে চারজনের মরদেহ ও কংকালটি। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এ পাঁচজনের পরিচয়।