স্বাস্থ্য খাতে ৩ বছরে ৭০ হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে

জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জাপানের নাগাসাকি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন মেমোরিয়াল হলে নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘International Szmposium, Advancing the global health agenda from Nagasaki to the world’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয় গতকাল সোমবার। এতে বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, জাপানসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা অংশ নেন। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সম্মিলনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম অংশ নেন। এতে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজ দেশ ও সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে জাপান সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় জানান।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গত ৩ বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ৩০ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের প্রায় ৫০০টি উপজেলায় ২৫ বেড থেকে বর্তমানে ৫০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ বেডে উন্নিত করা হয়েছে। ২২টি ৫০০ বেডের আধুনিক মানের চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ১০০০ বেডের ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ৫টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল দেশের ৮ বিভাগ পরিদর্শন করেন।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪ হাজার ২৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩২ রকমের ওষুধ দেয়া হয়। ক্লিনিকগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার লোকবল স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে ৪ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ, পরামর্শ ও ডেলিভারি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত নারী গড়ে ৬.৯ জন সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে প্রতিটি নারী গড়ে ২ জন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় জাতিসংঘের কাছ থেকে ২০১০ সালে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে।

টিকা প্রদানে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪ সালে টিকাদানে বাংলাদেশের সফলতা ছিল মাত্র ২ ভাগের নিচে। বর্তমানে ২০২২ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৯২ শতাংশ ১২-১৩ বছর বয়সি শিশু যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, টিটেনাস, হেপাটাইটিস রোগমুক্ত।

দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ৩.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব ওষুধ দেশের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম ও দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় এত বড় সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

আগামীতে দেশে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আওতায় গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ অসংক্রামক রোগ। এজন্য সংক্রমক রোগের পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জাপানসহ বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে সম্মিলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্মিলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন, নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কড়যহড়. অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধি Nayoko Yamamoto.

মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজেনি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পক্ষে Professor Kara Hanson.