আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক আগামীকাল বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক উপলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ইসি। এবার ভোট সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর দিকনির্দেশনা দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন ভবনের ৫২০ নাম্বার কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পাঁচ নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব এবং কর্মকর্তরা উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মন্ত্রী পরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রাণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বর্ডার গার্ড, র্যাব, আনসার, ডিজিএফআই, এনএসআই মহাপরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তরা জানান, সর্বশেষ রংপুর সিটি নির্বাচনের আদলে সাজানো হচ্ছে পাঁচ সিটি ভোটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে পাঁচ সিটির গুরুত্ব বিবেচনায় কোনো সিটিতে একটু বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে, বাছাই ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের শেষ সময় ২১ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে ও ভোট ১২ জুন। এ দুই সিটি নির্বাচনে ২৬ মে থেকে প্রচার চালানো যাবে।
আর রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২৮ মে। আর আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ৩১ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন, প্রতীক বরাদ্দ ২ জুন ও ভোট ২১ জুন। এ দুই সিটি ভোটে প্রচার চালানো যাবে ২ জুন থেকে। ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। এসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং সিসি ক্যামেরাও থাকবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ হবে। এসব সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছে।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোট হচ্ছে। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তিন সিটিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধে ক্ষতবিক্ষত ক্ষমতাসীন দলটি অনেকটাই বিদ্রোহের দাবানলে পুড়ছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়- এই স্লোগান দিয়ে সিটির ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধীদল বিএনপি।
কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর পদে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন দলটির তৃণমূলের অনেক নেতাই। মাঠ পর্যায়ের ওপর কেন্দ্রের এই শিথিলতা বিএনপিকে অনেকটাই অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া মেয়র পদে প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ভোট করছে জামায়াতে ইসলামিরও বেশ কয়েকজন মাঠের নেতা। এর বাইরে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে অংশ নিচ্ছে এই নির্বাচনে।
এরইমধ্যে দুই দলই তাদের মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেছে। তবে কে অংশ নিল আর কে নিল না- তা ছাপিয়ে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন কমিশন, মাঠ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
রাজনৈতিক দল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের মতে, সিটি নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের আচরণ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, ভোটারদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতিসহ নানা ঘটনার ওপর নজর থাকবে সবার।