শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যায় ছেলেদের তুলনায় কম হলেও মেয়েরা পদক ও ভালো ফল অর্জনে সবসময় এগিয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছাত্রীদের হার বেশি হলেও টারশিয়ারি এডুকেশনে মেয়েদের হার কিছুটা কম। তারপরও যত পদক, অ্যাওয়ার্ড আর ভালো ফল অর্জনে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে মেয়েরাই এগিয়ে থাকে। গতকাল বুধবার দুপুরে আইসিডিডিআর,বি’র সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ড. ফিরদৌসী কাদরীর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ অর্জন উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষায় অনেক ভালো করছে ও ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছে। কিন্তু এরপরও বিজ্ঞানে মেয়েদের আসা ও বিজ্ঞানে ভালো করা নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। এমনকি এই সমস্যা সারা পৃথিবীতেই আছে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও গবেষণায় অনেক বেশি সময় দিতে হয়। কিন্তু মেয়েদের সেই সময়টার বেশিরভাগ পরিবার গঠনেই দিতে হয়। যে কারণে গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিষয়টি মেয়েদের সঙ্গে একেবারে সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যায়। অনেকটা বলা যায়, মেয়েরা বাধ্য হয়েই কিছুটা বিজ্ঞান থেকে পিছিয়ে থাকে। তারপরও এসব প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও একজন ফেরদৌসী কাদরী তৈরি হয়। এমনকি তারা শুধু নারীদের জন্য নয়, তারা সব মানুষের জন্যই আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করে। ড. কাদরীকে অভিনন্দন জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ড. কাদরীর কৃতিত্ব উদযাপনের পাশাপাশি বিজ্ঞানের রূপান্তরকারী শক্তি ও এই ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়ার দিন আজ। বর্তমান সরকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে এবং প্রতিটি সেক্টরে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষামন্ত্রীর অভিনন্দনে কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ড. কাদরী জানান, এই ভালোবাসাই তার কাজের চালিকাশক্তি।
এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সহকর্মীরা ড. কাদরীর সঙ্গে তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানান। আইসিডিডিআর,বি’র ডিরেক্টর অব ফাইন্যান্স থমাস লিয়াম বারি অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন। প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ ড. ফিরদৌসী কাদরীর হাতে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ড. কাদরী বহু পুরস্কার পেয়েছেন, যা বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানকে প্রতিফলিত করে। ২০২১ সালে তিনি ‘এশিয়ার নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে খ্যাত মর্যাদাপূর্ণ র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হন। লারিয়েল-ইউনেস্কো ফর উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২০ তাকে বিজ্ঞানে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২০ সালে বিল গেটস ড. কাদরীকে মহামারি (কলেরা) প্রতিরোধের নায়ক (হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এসব সম্মাননা ছাড়াও তিনি আরও অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন- যেমন, ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে প্রফেসর সিএনআররাও প্রাইজ, ক্রিস্টোফার এবং রডলফ ম্যায়াক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে জীববিজ্ঞানে অসামান্য গবেষণার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির স্বর্ণপদক।