ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জি-৭ দেশের ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

জি-৭ দেশের ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

জি-৭ভুক্ত দেশগুলোকে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের জীবাশ্ম জ্বালানির বিনিয়োগ থেকে সরে এসে টেকসই নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ দ্রুত বাড়াতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থায়ন বন্ধ করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি, প্রাথমিকভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর দেশের নির্ভরতা কমানো এখন সময়ের দাবি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচিতে এই দাবি জানিয়েছেন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সদস্যরা। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বরাত দিয়ে কর্মসূচিতে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বলেন, উন্নয়ন অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা জি-৭ গ্রুপ এখনো দেয়নি। জাপানের হিরোশিমায় চলমান ৪৯তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা জি-৭ দেশগুলোর নেতাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে ব্যয়বহুল ও জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করতে এবং দ্রুততার সঙ্গে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছে।

তারা বলেন, জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর সরকার উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় জোর দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আর্থিকভাবে ও প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে দ্রুতই এগিয়ে আসবে- আমাদের তরুণ জলবায়ু কর্মীদের এমনটাই প্রত্যাশা। এ সময় অপরীক্ষিত, বিতর্কিত এবং ব্যয়বহুল প্রযুক্তি, হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়ার মতো ‘ভুয়া’ সমাধানগুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করার পাশাপাশি জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন জলবায়ু কর্মীরা। কর্মসূচিতে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা জানান, এবারের জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের মতো জরুরি বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবেন। বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়েও আলোচনা করবেন। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই জি-৭ দেশগুলোর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর পরিকল্পনা এবং উদ্যোগগুলো জানা খুবই জরুরি। তারা বলেন, জি-৭ দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিসমূহ আসলে স্থবিরই হয়ে আছে। উল্টো কিছু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিপরীত দিকে হাঁটছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো- এই আলোচনাটি এখনো জি-৭ দেশগুলোর সরকারের নিজেদের মধ্যেই বিলম্বিত হচ্ছে এবং তাদের উদ্যোগগুলোর বিষয়েও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো স্পষ্ট কোনোকিছু জানতে পারছে না। এ সময় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধ এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য জি-৭ দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। তারা মনে করেন, বিশ্ব নেতাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ (এলএনজি) জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা বন্ধ করা। বিশেষ করে এলএনজিতে বিনিয়োগ রোধ করা উচিত। কারণ, এটি একটি কার্বনভিত্তিক ক্ষতিকর জ্বালানি। কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, কেন আমাদের ক্ষতিকারক এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তা বুঝতে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করার সময় কিন্তু নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব এখন জলবায়ু ও জ্বালানি সংকটে ভুগছে। তাই কাজ করার সময় এখনই।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের এই নেতা বলেন, আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং জি-৭ দেশগুলোর মতো বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। এরকম জরুরি অবস্থায় আমাদের আর দেরি করার সময় নেই, এখনই কাজে নামতে হবে। এ সময় জলবায়ু অর্থায়নের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা এবং বরাদ্দের অন্তত ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের জন্য হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ দিন কর্মসূচিতে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বাংলাদেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট ও আর্থিক বোঝার পেছনে ক্ষতিকর ও দামের দিক থেকে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানি এলএনজি আমদানির প্রভাবকে দায়ী করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে তারা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ও ঘন ঘন লোডশেডিং এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে উ™ূ¢ত চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন। এছাড়াও বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসন্ন বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ এ সীমাবদ্ধ রাখবে এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।

কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে কাজ করতে হবে। কারণ তারা দুটি আন্তঃসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ। আসুন আমরা ব্যক্তি, ব্যবসা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে একত্রিত হই যাতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের সুবিধা হয় এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পথ প্রশস্ত করা যায়।’ অন্যদের মধ্যে কপ-২৮ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শক ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু সংকট শুধুমাত্র ভবিষ্যতের জন্য একটি বিমূর্ত হুমকি নয়; বরং এটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ। কিন্তু এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো জলবায়ু সংকটের জন্য একেবারে কম দায়ী। অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন, এরই মধ্যে জলবায়ু সংকটের জন্য প্রধান অপরাধী ধনী দেশ এবং জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক করপোরেশনগুলো তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে মুনাফার পাহাড় বানিয়েই যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা, এ সকল ক্ষয়ক্ষতির দায়িত্ব নেওয়া এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অর্থ প্রদান করার এখনি সময়। তাই অনেক দেরি হওয়ার আগেই, আমাদের উচিত যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। নইলে আমরা আমাদের সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের কাছে ঋণী হয়ে থাকব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত