জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। এবছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ।’ জাতীয়ভাবে এবার জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয় কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়। তিন দিনব্যাপী (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।
এছাড়াও ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন। জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুউল্লাহ, শাজাহান খান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও এসএম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চায়। এই নির্বাচনে যারা বাধা দিবে তাদেরকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কথা বারবার বলে আসছি। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, অবাধ, সুষ্ঠুভাবে করবো। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এএফএম হায়াতুল্লাহসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদার নেতৃত্বে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে একাডেমীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবি’র সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে উপাচাযের্র সভাপতিত্বে কবি’র সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ঢাবি উপাচার্য বলেন, মানবতার কবি, সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। নজরুলের সৃষ্টি তাকে অমর করে রেখেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কেন্দ্রীয় নজরুল একাডেমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নজরুল একাডেমি ভবনে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে (মগবাজার মোড় বেলালাবাদ কলোনি, ঢাকা) তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পাশাপাশি কবির নাতনী খিলখিল কাজীসহ ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।