সিসিক নির্বাচন

বিএনপি-জামায়াতের বেশিরভাগ প্রার্থী মামলার আসামি

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সিলেট ব্যুরো

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের বেশিরভাগ নেতাকর্মী মামলার আসামি। সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসে দায়েরকৃত হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৪২টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৮৬ জন কাউন্সিলর (সাধারণ) প্রার্থীর মধ্যে ১১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩৫টি মামলা রয়েছে, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সোহেল রানার নামে। তিনি কাজিরখলার স্থায়ী বাসিন্দা। সোহেল রানা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মামলাগুলোর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন আদালতে ২৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। নগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মঞ্জুর রহমান। তিনি শাহপরান আবাসিক এলাকার (বহর) স্থায়ী বাসিন্দা এবং মদনমোহন কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তার নামে মামলা আছে ২৪টি। এর মধ্যে ১০টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রদলের স্থায়ী বহিষ্কৃত সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমনের নামে মামলা আছে ২৩টি। এর মধ্যে বর্তমানে ১৮টি মামলা বিচারাধীন। বাকি ৪ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন সুমন। বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বিস্ফোরক উপাদানাবলী ২ আইনের ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা। সুমন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার বাড়ি শাহপুর খুররুমখলায়। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সময়ের নির্বাচনগুলোতে আগের মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য মানুষ প্রার্থী হচ্ছেন না। দিন যত যাচ্ছে নির্বাচনে কালো টাকা-পেশীশক্তি কিংবা ক্ষমতার দাপট বেড়েছে। এমনিতেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা আছে। তবে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা গেলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ৩৫ মামলার আসামি মো. সোহেল রানা জানান, নিজের ঘরে ঘুমের মধ্যে থেকেও মামলার আসামি হতে হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আমার নামে মামলা দেয়া হয়। অথচ রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সম্পর্ক নেই। ২৪ মামলার বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মঞ্জুর রহমান বলেন, কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়েও আমার নামে মামলা দেয়া হয়। ব্যক্তিগত কোনো কারণে নয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমার নামে এসব রাজনৈতিক মামলা দেয়া হয়েছে। এলাকার জনসাধারণ আমাদের ভালো করে চেনেন-জানেন। কারা ভালো মানুষ আর কারা অপরাধী।

২৩ মামলার আসামি ছাত্রদল নেতা আলতাফ হোসেন সুমন বলেন, সবকটি মামলাই রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ব্যক্তিগত কোনো অপরাধ করে নয় বরং সরকারের অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়েই এসব মামলার আসামি হয়েছি- এমন দাবি সুমনের।

৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম ৯ মামলার আসামি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিসিক নির্বাচনে অংশ নেয়ার দায়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্যের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা বিচারাধীন। একটি মামলা স্থগিত রয়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক শিবির নেতা সায়ীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মোট ১৩ মামলার আসামি। এর মধ্যে ৭টি মামলা বিচারাধীন। ৬টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জামায়াত নেতা ফয়জুল হক ১৩ মামলার আসামি। এর মধ্যে ৯টি থেকে খালাস পেয়েছেন, ৪টি বিচারাধীন। আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ রানা আহমেদ ১০ মামলার আসামি (৮টি বিচারাধীন, ২টি খালাস)। বিদ্যুৎ দাসও ৪ মামলার আসামি (৩টি বিচারাধীন, একটি খালাস)।

জগদীশ চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৯ নস্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. বাবুল খান ৭ মামলার আসামি (৫টি অব্যাহতি, ২টি বিচারাধীন)। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মীর্জা এম. এস. হোসেন ৪ মামলার আসামি। বর্তমানে সবকটি মামলা বিচারাধীন আছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জামায়াত সমর্থিত মোহাম্মদ আব্দুল কাদির ৮ মামলার আসামি ছিলেন। এর মধ্যে ৪ মামলায় খালাস পেলেও বর্তমানে ৪ মামলা বিচারাধীন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা এ.বি.এম. জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ৪ মামলার আসামি। সবকটি মামলা বিচারাধীন । অপর প্রার্থী মো. শামছুর রহমান কামাল ৫ মামলার আসামি। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এমসি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. বদরুল আজাদ রানা ৮ মামলার আসামি। ২ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৬ মামলা বিচারাধীন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মকসুদ আহমদ ১১ মামলার আসামি। ২ মামলায় খালাস পেলেও তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৯টি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল আহমদ ১৪ মামলার আসামি। এর মধ্যে ৫ মামলায় খালাস পেলেও তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৯ মামলা বিচারাধীন।

আবার সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তারা মামলার আসামি হলেও তারা বেশিরভাগ মামলায় খালাস কিংবা অব্যাহতি পেয়েছেন। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু ৬ মামলার আসামি। এর মধ্যে ৪ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। বাকি ২ মামলার কার্যক্রম আদালতে চলমান রয়েছে।

৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী, স্বেচ্ছসেবক লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ লায়েক ৩ মামলার আসামি হলেও দুটিতে খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা মো. রিমাদ আহমদ রুবেল ৭ মামলার আসামি হলেও ৬টিতে খালাস পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয়ভাবে বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করছে। তবে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী ৪৩ কাউন্সিলর প্রার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে দলটি। নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতের স্পষ্ট অবস্থান জানা না গেলেও জামায়াতের অনেকেই কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।