ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজার পৌর নির্বাচন

বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আওয়ামী লীগের জন্য

বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আওয়ামী লীগের জন্য

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় বাকি মাত্র দুই দিন। আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। ১২টি ওয়ার্ডের ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটারকে ঘিরে চলছে জোর তৎপরতা। সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহলের দেয়া তথ্য বলেছে, শেষ মুহূর্তে এসে মেয়র পদে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। তবে ভোটার মন জয় করে বিজয় হতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। এ নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী সহ ৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে কে হচ্ছেন মেয়র এই নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা বিশ্লেষণ। আর এসব ভোটারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে। অপর তিন প্রার্থী থাকলেও তাদের নিয়ে কোনো কৌতূহল নেই ভোটারদের মধ্যে।

শুরু থেকে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে ছিলেন আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীর পারিবারিক রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে প্রকাশ্যে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উঠে ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মীরা। ফলে কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করে মাঠে নামে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজের সমর্থিত নানা পেশাজীবীরা।

বিশেষ করে গত সোমবার (৫ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি কক্সবাজার আসেন। ওই দিন তিনি এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান ছাড়াও কথা বলেন দলের নানা পর্যায়ের কর্মীদের সাথে।

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে গেছেন, যার কারণে এপর্যন্ত ১৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বাইরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী একযোগে মাঠে রয়েছেন। যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রচারণা দল রয়েছেন- একই সঙ্গে রয়েছেন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের পৃথক দল। প্রার্থীর বাইরে টানা প্রচারণায় সাধারণ ভোটারদের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ পরিস্থিতি বিপুল ভোটে নৌকা বিজয়ের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি। তার পক্ষে নেমেছেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরাও। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, মাহাবুবের পক্ষে ব্যবসায়ীরা ১২ ওয়ার্ডে ১২টি প্রচারণার দল নামিয়েছে। ব্যবসায়ীরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। একই সঙ্গে নৌকার অবস্থান আরো সুবিধাজনক হওয়ার কারণ হিসেবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইশতিয়াক আহমদ জয় জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বোচনি প্রচারণার শুরুতে স্থানীয়-বহিরাগত একটি ইসু মাঠে এসেছেন। পৌরসভার ৯০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শহরে এসেছেন। এখানে স্থায়ী বলতে কিছুসংখ্যক রাখাইন ছিল। এতে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়েছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র কিছু ব্যক্তি যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তাদের নিয়ে বিরূপ আচরণ করা হয়েছে। এটার প্রভাবও পড়েছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর ভাই জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম সোহেল নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। এটাও ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে।

এতে বসে নেই বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদও। প্রার্থী প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। যার সাথে প্রার্থী ছোট্ট ভাই কক্সবাজার সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, বোন জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী হলেও ভাইয়ের জন্য পদত্যাগকারী তাহমিনা চৌধুরী লুনা, অপর ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল, ওই পরিবারের তিন বধু, বোনরা ব্যাপক গণসংযোগ করে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কৃত ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জানে আলম পুতু জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় রাশেদকে মানুষ কখনো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করেন না। দলের নেতারা তাকেই মেয়র করতে মাঠে রয়েছেন। একই সঙ্গে প্রার্থী পিতা ও ভাই সবাই জনপ্রিয় মানুষ। ১২ জুন ভোটে নারকেল গাছ প্রতীকের বিজয় হবে।

মাসেদুল হক রাশেদ জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতাকর্মী, সাধারণ ভোটাররা তাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে তিনিই বিজয় হবেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আগামী ১২ জুন নৌকা বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। সাধারণ ভোটাররা উন্নয়নের ধারাবাহিতা রক্ষায় নৌকার পক্ষে রায় প্রদানে সম্মত রয়েছেন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ। আচরণবিধি রক্ষা এখনও মাঠে তৎপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত