মুগ্ধতা ছড়াল গীত ও নৃত্য

শেষ হলো কোচ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘বিহু’ উৎসব

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফেরদৌস আহমাদ বাবুল, নেত্রকোণা

বাহারি পোশাক পরে নিজেদের ভাষা ও ঢংয়ে ছেলে-মেয়েদের গীত ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার রাতে শেষ হয়েছে নেত্রকোণার অন্যতম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়ের বিহু উৎসব। এর আগে ‘আমার সংস্কৃতি, আমার অহঙ্কার’- এই প্রতিপাদ্যে গারো পাহাড়ের পাদদেশ নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরিতে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি অডিটরিয়ামে ওইদিন বিকালে শুরু হয় এই জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা। এসবের মধ্যে অন্যতম ছিল অতিথিবরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণ। বিকাল ৩টায় শুরু হয় বরণ অনুষ্ঠান। এ সময় কোচ সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা তাদের ঐতিহ্যের ধারক যুদ্ধ-সরঞ্জাম ও বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতি হাতে বর্ণিল পোশাকে নাচ-গান করে নিজেদের প্রথায় ফুল দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়। অতঃপর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় আলোচনা সভা। নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্ব ও একাডেমির নৃত্য শিক্ষক মালা আর্থা আরেংয়ের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথি বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি রক্ষা, চর্চা ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কোচ সম্প্রদায়ের বিহু উৎসবসহ বাংলাদেশের ৫০টি নৃগোষ্ঠীর শতাধিক উৎসবগুলো নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও তাদের বিভিন্ন উৎসব সম্পর্কে জানতে পারবে মানুষ।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকবি সুজন হাজং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কোচ সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। কোচ জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব বিহু। এই বিহু হল কোচদের বর্ষবরণের উৎসব। কোচ নৃত্য ও গীতের মাধ্যমে বিহু উৎসব উদযাপিত হয়। কোচদের বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় বিহু উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমাদের একাডেমির এই আয়োজন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজিব-উল-আহসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গনি তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. সফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সোহরাব হোসেন তালুকদার, শিক্ষাবিদ ও গবেষক রেভা. মনিন্দ্র নাথ মারাক, হাজং লেখক ও গবেষক মতিলাল হাজং, লেখক ও গবেষক শরবিন্দু সরকার হাজং, কোচ লেখক ও গবেষক যুগল কিশোর কোচ, সমাজকর্মী সুশান্ত কোচ প্রমুখ।

বিহু উৎসবের সেরা আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কালচারাল একাডেমির নৃত্য ও সঙ্গীত শিক্ষকের পরিচালনায় কোচ ছেলে-মেয়েরা বর্ণিল পোশাক পরে নেচে-গেয়ে নিজেদের গৌরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাদের প্রাণবন্ত পরিবেশনায় মুগ্ধ সবাই।