পানির অপর নাম জীবন। তবে সে পানি অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। গত দুই বছরে যশোরের কেশবপুরে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৭ জনের ৬ জনই শিশু। মারা যাওয়া শিশুরা দেড় থেকে ৩ বছর বয়সি। প্রায় সবাই খেলা করতে গিয়ে অভিভাবকের চোখের অগোচরে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে পাঁজিয়া ইউনিয়নে চলতি বছর ১ জন শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সচেতন মহল জানিয়েছেন, শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বিষয়টি সেভাবে আলোচনা না হওয়ায় অনেকটাই আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। জানা গেছে, কেশবপুরে বর্ষা মৌসুমসহ অন্য সময়ও পানিতে ডুবে শিশুরা মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মায়েরা সাংসারিক কাজ করেন ও বাবারা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকেন। এ সময়টাতে অভিভাবকদের চোখের অগোচরে বাড়ির আঙিনার পাশে থাকা পুকুর, ডোবা ও মাছের ঘেরের পানিতে ডুবে এসব শিশুরা মারা যায়।
এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্র মতে, গত ১০ মে দুপুরে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর গ্রামের কৃষক হযরত আলীর দেড় বছর বয়সি শিশু নাহিদ হাসান খেলা করতে গিয়ে বাড়ির সামনে থাকা পুকুরে পড়ে মারা যায়। এছাড়া ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে নাঈম হোসেন (২), ৮ সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুর গ্রামের তরিকুল ইসলামের শিশু মেয়ে খাদিজা খাতুন, ৩ সেপ্টেম্বর সন্যাসগাছা গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুরাইয়া খাতুন (২), ৩০ জুন মাদারডাঙ্গা গ্রামের আবু জাফরের দেড় বছর বয়সি শিশু আমেনা খাতুন, ২ মে বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের দেড় বছর বয়সি শিশু হামিদুল ইসলাম পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর পলাশ বলেন, শিশু মৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে পরিবারকে সর্বাধিক সতর্ক হতে হবে। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের তত্ত্বাবধানে রাখা ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাঁতার শেখাতে হবে। এ বিষয়ে আমিসহ ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের নিয়ে আমার ইউনিয়নে অভিভাবকদের বারবার সচেতন করা হচ্ছে।
এছাড়া সরকারিভাবে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিলে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।
উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুন্ডু জানান, ২০২২ সালের ২৫ জুলাই প্রথমবারের মতো ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হয়েছে। আমাদের বিভাগ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। অভিভাবকদের সচেতন করার মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, কেশবপুরে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া অধিকাংশই শিশু। হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, খেলা করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের অসচেতনার কারণে বাড়ির পাশের পুকুরে ও ঘেরে পড়ে এসব শিশুরা মারা যায়। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। আর সচেতনতায় পারে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে।