ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিকিৎসকদের আন্দোলন

অবরুদ্ধ বিএসএমএমইউ ভিসি সময় চাইলেন ৭ দিন

অবরুদ্ধ বিএসএমএমইউ ভিসি সময় চাইলেন ৭ দিন

পাঁচ শতাধিক চিকিৎসকের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি, বকেয়া ভাতা পরিশোধ এবং ভাতা নিয়মিত করার দাবিতে সকাল থেকে আন্দোলন-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। একপর্যায়ে উপাচার্য (ভিসি) কার্যালয় ঘেরাও করে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন চালান তারা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত এ আন্দোলন চালান চিকিৎসকরা। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ বরাদ্দ পেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সাত দিন সময় চাইলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ করে বলেছি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে অবশ্যই তা বণ্টন করে দেয়া হবে। কিন্তু আলোচনার জন্য সময় প্রয়োজন। তবুও আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ বরাদ্দ পেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার চেষ্টা করব।

বিএসএমএমইউ এবং আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে- বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ব্লকের সামনে জড়ো হতে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

এ সময় চিকিৎসকরা ৫০ হাজার টাকা ভাতা দাবিসহ তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলেন, ২০১৯-২০ সেশন থেকে নন-রেসিডেন্স কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯-২০ সেশনের স্টুডেন্টরা সেই ভাতা নিয়মিত পেলেও পরের বছর থেকেই তা অনিয়মিত হয়ে যায়। ২০২২-২৩ সেশনের নন-রেসিডেন্স চিকিৎসকরা ১২ মাসের মধ্যে মাত্র ৩ মাসের ভাতা পেয়েছেন, বাকি ৯ মাসই বকেয়া। কোর্সে থাকাকালীন অন্য কোনো চাকরি, ডিউটি, চেম্বার ইত্যাদি করার অনুমতি না থাকায় এই কোর্সের চিকিৎসকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একেবারেই শূন্য হাতে ধারকর্য করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের।

কর্মচারীদের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অভিযোগ : গতকাল সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমদের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখার সময় বিএসএমএমইউ’র তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও ওই একই ভবনে এসে অবস্থান নেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপাচার্যের ইশারায় কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছেন। দুপুর ২টায় তাদের কোনো কর্মসূচি থাকার কথা নয়। আমরা ভিসি অফিসের সামনে একটি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তিনি অফিস থেকে বের হননি।

এ সময় কর্মচারীদের কাছে তাদের অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, তাদের এক কর্মচারীকে চিকিৎসকরা হেনস্থা করেছেন। এ কারণে তারা অবস্থান নিয়েছেন।

এ বিষয়ে এফসিপিএস পার্ট-২ কোর্সে থাকা ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী উপাচার্যের কাছে একটি উত্তরের জন্য এসেছিলাম। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ক্লান্ত। এভাবে চিকিৎসা বাদ দিয়ে দাবি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘোরা যাবে না। সকাল থেকে উপাচার্যের কাছে আমরা উত্তরের আশায় অবস্থান করলেও তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে আসেননি। উল্টো কর্মচারীরা এসে আমাদের আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন- ঢাকা মেডিকেল, স্যার সলিমুল্লাহ ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেলে তা অধ্যক্ষদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। তারা এ মুহূর্তে টাকার ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ভিসি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশিক্ষা (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) নিতে শিক্ষার্থী-চিকিৎসকদের টাকা পরিশোধ করে পড়াশোনা করতে হয়। অথচ আমরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের ভাতা পরিশোধ করছি।

তিনি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার আগে চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। দায়িত্ব নেয়ার পর সে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অথচ আজ তারা মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। আমার কার্যালয় ঘেরাও করেছে।

তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে তুলতে একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্রে নেমেছে। বিএনপি ও জামাতপন্থি চিকিৎসকদের নেতৃত্ব নিতে ইস্যু সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত