জাতীয় সরকারের অধীনে ভোট চায় ইসলামী আন্দোলন
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। অন্য বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে, তাতে তার সম্মতি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাজধানীর পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের এই অবস্থান ঘোষণা করেন তিনি।
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করিমের ওপর হামলার অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চরমোনাই পীরের দলটি। মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাই। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা সংবিধানে করা হয়েছে, সেটি দেশবাসী মেনে নেবে না বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
জাতীয় সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এবং জাতীয় সরকারে যারা থাকবেন তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এটাও ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাব।
চরমোনাই পীর বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেও আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলছি। বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে সেখানে প্রত্যেক নির্বাচনে যারা হেরেছে তারা নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে। আমরা চাইছি, এমন একটা সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকবে বিধায় কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
জাতীয় সরকারে তারা কাদের চাইছেন সে প্রশ্নে চরমোনাইয়ের পীর বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই আমরা জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন এবং সরকার কাঠামো কি হবে তা প্রকাশ করব। এই দাবি নিয়ে আগামী ২৪ জুন মতবিনিময় করার ঘোষণাও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেজাউল করিম বলেন, দল হিসেবে সামনে দলীয় সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
সুষ্ঠু হয় না, হয়নি বিধায় এই দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। বরিশালে ফয়জুল করিমকে ঘুষি দেয়ার ঘটনায় সিইসির মন্তব্যের (উনি কি ইন্তেকাল করেছেন?) কড়া সমালোচনা করে চরমোনাই পীর বলেন, মুফতি ফয়জুল করীমের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ নিয়ে ‘তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও
উপহাস’ করেছেন তিনি। আমরা অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাই। তিনি পদত্যাগ করতে না চাইলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত তার অপসারণ চাই।
এই দাবিতে আগামী ২১ জুন নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখী মিছিলের ডাকও দেয় ইসলামী আন্দোলন। দলের আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আশরাফ আলী আকন, মাহবুবুর রহমান, নুরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ইমতিয়াজ আলম, আহমদ আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।