দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ উঁচু-নিচু হয়ে চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকে তৈরি হয়েছে। বেহাল এই সড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই (ওভারলোডিং) ট্রাক চলাচলের কারণেই এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের ভাষায়- সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে ‘রাটিং’। তীব্র গরমে সড়কে ওভারলোডেড যানবাহন চললে এই রাটিংয়ের সৃষ্টি হয়। এটির জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে একই লেনে ভারী যানবাহন চলাচলকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পণ্যবোঝাই যানবাহন যে লেন দিয়ে চলে, মূলত সেই লেনে রাটিং পয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু অপর লেনটি সুরক্ষিত রয়েছে। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণেই রাটিং হচ্ছে। সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বারিয়াপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কে কমপক্ষে ২১ স্থানে এমন রাটিং রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাটিং রয়েছে সাতটি স্থানে। এর মধ্যে কয়লাবাড়ি, ধোবড়া, কানসাট, ইসরাইল মোড়, একাডেমি মোড়, ছত্রাজিতপুর, বহলাবাড়ী, হরিপুর ও দ্বারিয়াপুরে রাটিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পাথরবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়েও ৬০ টন বেশি পাথর নিয়ে ট্রাক চলাচল করে এই সড়কে। অন্যদিকে কয়েক দিনের তীব্র গরমে বিটুমিন গলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে না পারলে এ অবস্থা থেকে সহসাই মুক্তি মিলবে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে- অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের কয়লাবাড়ি এলাকায় এক্সএল রোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওজন যন্ত্রটি এক মাস যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে যায়। এর পর আর সেটি চালু করা হয়নি।
বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রাকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২২ টন পণ্য পরিবহন করার নির্দেশনা রয়েছে। তা অমান্য করে ৪০ থেকে ৯০ টন পর্যন্ত মাল বহন করা হচ্ছে এই সড়কে। সদর উপজেলার চকআলমপুরের রিকশাচালক মামুন বলেন, সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। আমরা যারা কম গতির যানবাহন চালাই, তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে আছি। সড়কের এক লেন থেকে অন্য লেনে যেতে গেলে মাঝখানে উঁচু। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
ব্যবসায়ী কাশেম আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ যাওয়ার সময় অসুবিধা হয় না। কিন্তু সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার সময় ব্যাপক সমস্যা হয়। ভারী যানবাহনের কারণে সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার সড়কের বাম দিকে দেবে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যারা মোটরসাইকেলে চলাচল করি তারা এই সড়কে চরম ঝুঁকিতে থাকি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কের এমন বেহাল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এরই মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কে থাকা রাটিং পয়েন্টগুলোতে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। জেলার প্রধান সড়কগুলোতে যতগুলো রাটিং পয়েন্ট আছে, সবগুলো সংস্কার করা হবে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর থেকে দ্বারিয়াপুর পর্যন্ত যতগুলো রাটিং পয়েন্ট রয়েছে, সবগুলো পয়েন্টে সংস্কার কাজ শেষ করা হয়েছে। সাধারণত তীব্র গরম আবহাওয়ায় সড়কে ওভারলোড যানবাহন চললে এমন রাটিংয়ের সৃষ্টি হয়। বছরের মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন স্থানে রাটিং পয়েন্ট তৈরি হতে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পণ্য ওভারলোড করে ট্রাক যাতায়াত করছে। খরতাপে যেসব সড়ক দিয়ে ওভারলোড যাতায়াত হয়, সেসব সড়কে বেশি রাটিং পয়েন্ট দেখা যায়। সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ওভারলোড পণ্য নিয়ে সড়কে যেন যানবাহন চলতে না পারে সে জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার শাহবাজপুরের কয়লাবাড়ি এলাকায় এক্সএল রোড নিয়ন্ত্রণ-স্কেল বসানো হচ্ছে। স্কেলটি চালু হলে সড়কে এমন অবস্থা আর সৃষ্টি হবে না।
ওভারলোড যানবাহনের দৌরাত্ম্য কমানো হলে সড়কে রাটিং তৈরি হবে না। ফলে অন্যসব ছোট যানবাহন আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে বলেও মন্তব্য করেন জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক।