রাজধানীতে জমজমাট আমের ভ্রাম্যমাণ বাজার

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আমের ভরা মৌসুম এখন। পাইকারি বাজার থেকে স্থানীয় পাড়া, মহল্লা সবখানেই চলছে আমের রাজত্ব। সড়ক, অলি-গলিতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ আমের বাজার। কেউ বিক্রি করছেন ভ্যানে করে, আবার কেউ রাস্তার পাশে খোলা কেরেটে (প্লাস্টিকের বক্স) করে বিক্রি করছেন এই মৌসুমি রসালো ফল। আর এসব ব্যবসায়ীর মূল ক্রেতা হচ্ছে অফিস ফেরত কর্মজীবীরা। সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে চোখের সামনে আম দেখামাত্রই দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। এলাকাভেদে এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী প্রতি কেজি হাড়িভাঙা আম বিক্রি করছেন ৭০-৮০ টাকা, হিমসাগর ৮০-৯০ টাকা, আর আম্রপালি ৫০-৭০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ এবং খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভ্রাম্যমাণ আম বিক্রির এমন চিত্র দেখা গেছে। রামপুরার বনশ্রী এলাকার ডি-ব্লকে একটি বাড়ির নিচে রাজশাহীর আম বিক্রি করছিলেন মো. বিল্লাল হোসেন। আম বিক্রির পাশাপাশি তিন সেই বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করেন। কথা হলে তিনি জানান, বাড়ির মালিকের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। সেখানে তাদের আমের বাগান আছে। এ বছর আমের ফলন ভালো হওয়াতে তাকে দিয়ে বাসার নিচে আম বিক্রি করাচ্ছেন। আম্রপালি এবং হাড়িভাঙা আম বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ৭০ টাকায়। আর ল্যাংড়া প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। বিল্লাল হোসেন বলেন, নিজস্ব বাগানের আম হওয়ায় পরিচিত লোকজনের কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে। যারা একবার কিনছেন ঘুরেফিরে তারাই বারবার নিয়ে যাচ্ছেন। দিনে গড়ে দেড়শ’ কেজি আম বিক্রি হয়। বর্তমানে ল্যাংড়া এবং হাড়িভাঙা আমের সিজন শেষের দিকে। আম্রপালির সিজন শুরু হয়েছে কিছু দিন আগে। এই আম বাজারে আরও দুই থেকে আড়াই মাস পাওয়া যাবে। মধ্য বাড্ডা ফুটওভার ব্রিজের নিচে রিকশাভ্যান থেকে আম কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদুল আলম। অফিস থেকে ফেরার পথে পরিবারের জন্য ৫ কেজি হিমসাগর আম কেনেন ৭৫ টাকা দরে। দোকানি অবশ্য দাম চয়েছিলেন প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। তবে দামাদামি করে ঠিক করলেন একসঙ্গে ৫ কেজি কিনবেন, তাই ৭৫ টাকার বেশি তিনি দিতে পারবেন না। কিছুক্ষণ দরদামের পর বিক্রেতা ৭৫ টাকা কেজিতেই রাজি হন। বর্তমানে আমের দাম কেমন জানতে চাইলে এই বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, শুনেছি ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম বেশি মনে হচ্ছে। আমি আজ যে হিমসাগর আম কিনেছি, ছোটবেলায় জানতাম এটা গুটিআম। কিন্তু তারা এখন হিমসাগর বলে বিক্রি করছে। এটা প্রকৃতপক্ষে হিমসাগর না। মেরাদিয়া হাট এলাকায় রিকশাভ্যানে করে দেড় মাস যাবত আম বিক্রি করছেন মো. সজিব। এই মৌসুমে আম বিক্রি করে ভালই লাভ হয়েছে তার। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা লাভ থাকছে। যে কারণে অনেকটাই খুশি। তিনি বলেন, এ বছর ভালোই আম বিক্রি হয়েছে। আমরা রিকশাভ্যানে আম বিক্রি করি, তাই কম লাভেই ছেড়ে দেই। যে কারণে বেচা-বিক্রি ভালোই হচ্ছে। বর্তমানে ৭০ টাকা কেজিতে হিমসাগর আম বিক্রি করছি। এই আমটা বাজারে অল্প কিছুদিন হয়েছে আসা শুরু করল। ঈদের পরও এই আম বাজারে পাওয়া যাবে। হিমসাগর আম খেতে অনেক ভালো এবং দামও তুলনামূলক কম, তাই ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে এই আম। গত দেড় মাস ধরে দক্ষিণ বনশ্রীর বিভিন্ন অলিগলিতে একইভাবে আম বিক্রি করছেন আরেক ব্যবসায়ী মো. সোহাগ। বছরে অন্য সময় তিনি রিকশাভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। এ বছর আমের সিজনে প্রতিদিন তিনি গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ কেজি বিক্রি করছেন। এই মৌসুমে আমের বেচাকেনা নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমের পাইকারি পর্যায়ে দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় বেচা-বিক্রি খুবই কম। গত এক সপ্তাহে তিনবার আম এনেছি পাইকারি বাজার থেকে। কিন্তু বিক্রি করার পর লাভ তেমন একটা থাকে না। বাদামতলি এবং যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজার থেকে আম কিনে আনি। বর্তমানে আম্রপালি বিক্রি করছি ৪০-৫০ টাকায়। কিন্তু এই আমটাই পাইকারি বাজারে ৩৫-৩৮ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।