ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা ১০ কোটি টাকা

দুশ্চিন্তায় নওগাঁর ব্যবসায়ীরা
ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা ১০ কোটি টাকা

নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষ্যে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়া প্রস্তুতের মূল উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের নিকট বিগত বছরের বকেয়া পাওনা টাকা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো হলে তারা আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশে ‘চামড়া পট্টি’। আর কয়েক দিন পরেই এসব চামড়া আড়ত ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। তাই পুরোনো চামড়া বিক্রি করে গুদাম খালি ও গুদাম সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ মেট্রিক টন লবণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

বকেয়া টাকার পাশাপাশি লবণের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতিবস্তা মোটা লবণের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এতে বাড়বে চামড়া সংরক্ষণের খরচ। আর সংরক্ষণের অভাবে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- ঢাকার ১৫ জন ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনে না। সিন্ডিকেট থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। বিগত বছরগুলোর প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প। চামড়ার শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোরবানির সময় মৌসুমি প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করলেও সারা বছর কাজ করে অন্তত ৫০০ জন। চামড়া সংরক্ষণের জন্য এরইমধ্যে আমরা গুদাম ঘরগুলো সংস্কারের কাজ করছি। ঈদের দিন থেকে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে।

চামড়া ব্যবসায়ী শাহিনুর ইসলাম বলেন, প্রতি বছর সরকার কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী আমরা চামড়া কিনি। চামড়া কিনে লবণজাত করার পর ট্যানারি মালিকরা চামড়া না কিনে পিছুটান দেয়। যদি ট্যানারি মালিকরা জেলা পর্যায়ে এসে চামড়া কিনত তখন আমাদের জন্যও সুবিধা হতো এবং দামও পাওয়া যেত। আমরা চামড়া প্রস্তুত করে ঢাকায় গিয়ে ট্যানারি মালিকদের দিয়ে আসতে হয়। চামড়া পচনশীল পণ্য। তখন বাধ্য হয়ে একপ্রকার জিম্মি হয়ে তাদের দেয়া দামে বিক্রি করতে হয়। সরকার যে দাম বেধে দেয় সে দামে আর বিক্রি করা সম্ভব হয় না। আবার বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর আমাদের ঘুরানো হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় ৩০ বছর থেকে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত প্রায় ১০ বছর থেকে ব্যবসায় মন্দা চলছে। গত বছর প্রায় ৭০ লাখ টাকার চামড়া কিনেছিলাম এবং বিক্রিও হয়েছে।

গত বছরসহ বিগত বছরের প্রায় ৪০ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা আছি। বতর্মানে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর লবণ ১৫ টাকা ৯০ পয়সা কেজিতে কিনলেও এবছর ২১ টাকা কেজি। জেলায় প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। গরুর একটি চামড়ায় ১২০ টাকার লবণ, ৩০ টাকার শ্রমিক ও ১০ টাকা পরিবহনে খরচ হয়। এখনো বকেয়া টাকা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করেনি। এ বছর চামড়া কিনা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সভাপতি মো. মোমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বকেয়া হতে শুরু হতে থাকে। জেলার প্রায় দুই শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ঢাকার ১৫ জন ট্যানারি মালিকদের নিকট প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া টাকা পাওয়া গেলে আবারো ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবে। সরকার ট্যানারি মালিকদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব সুবিধা জেলা পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা পেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। অন্যথায় আগামীতে হয়তো এ শিল্পটি টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত