ঈদযাত্রায়ও লঞ্চে যাত্রীর নেই ভিড়

পদ্মা সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে অতীতের চিত্র

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরে ফিরছে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিাণাঞ্চলের মানুষ। তবে বিগত বছরগুলোর মতো ঘরে ফিরতে লঞ্চ ও বাসের টিকিট পেতে কালোবাজারীসহ কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না ঘরমুখো মানুষকে। চাইলেই তারা হাতের নাগালে পাচ্ছেন লঞ্চের কেবিন কিংবা বাসের টিকিট। পাশাপাশি লঞ্চের কেবিন কিংবা বাসের টিকিটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ নেই বললেই চলে। এক বছর পূর্বে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই বরিশালের সড়ক ও নৌ পথে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। তবে সড়কপথে যাত্রীসংখ্যা ৩ থেকে ৪ গুন বাড়লেও যাত্রী হারিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে নৌপথে। দুটি ঈদ, পূজা ও বড়দিনের মতো উৎসব ছাড়া লঞ্চের অধিকাংশ কেবিনই থাকে ফাঁকা। এ ঈদেও বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। এক সপ্তাহ আগে থেকেই বরিশাল থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও এখনো সহজেই মিলছে যাওয়া আসার কেবিনের টিকিট। এমনকি বিড়ম্বনা ছাড়াই ফিরতি টিকিটও মিলছে অতি সহজে। সূত্র মতে, একসময়ে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। কিন্তু এখন তার অতীতের জৌলুস হারিয়ে কোনোমতে টিকে আছে। ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে কমছে লঞ্চের সংখ্যাও। যাত্রী না থাকায় করুন অবস্থা বিরাজ করছে লঞ্চ মালিক ও নৌপথের পরিবহন সেবায় নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে। বর্তমানে প্রতিদিন লঞ্চগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি কেবিন খালি যাচ্ছে। বিলাসবহুল অনেক লঞ্চ ঘাটে অলস পড়ে আছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও ভাড়া কমিয়েও পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না লঞ্চগুলো।

ফলে বদলে গেছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের চিরচেনা দৃশ্য। একসময় ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের লঞ্চের একটি কেবিনের টিকিট ছিল সোনার হরিণ। পদ্মা সেতু চালুর পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। নদীবন্দর সূত্র জানায়, বরিশাল তথা দক্ষিণের অন্তত ২০টি নৌরুটের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ। টানা লোকসানের কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এসব রুটে চলাচলকারী অন্তত ৩০টি লঞ্চ। সেই সঙ্গে চলছে একের পর এক নৌরুট বন্ধের প্রক্রিয়া। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই নৌপথে অনেকটা দূরবস্থা অবস্থা বিরাজ করছে। তবে সড়ক পথ ফিরে পেয়েছে নব যৌবন। গত এক বছরের তুলনায় এখানে পরিবহন সংখ্যা বেড়েছে তিন গুনেরও বেশি। ঈদ উপলক্ষ্যে লঞ্চের পরিবর্তে সড়ক পথেই ঘরে ফিরছেন সিংহভাগ যাত্রীরা। তবে যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরে ছিরছেন তারা অধিকাংশই আরামদায়ক ভ্রমণ হিসেবে লঞ্চকেই বেছে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলার মালিক মঞ্জুরুল আলম ফেরদৌস বলেন, বিগত ১ বছর ধরে নৌপথে যাত্রী সংকট চলছে। বরিশাল থেকে একবার ঢাকা ঘুরে এলেই দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এটা একদিন কিংবা দুই দিন মানা যায়। কিন্তু একটানা হলে কি সম্ভব? আমরা তো আর বাড়ি-জমি বিক্রি করে লঞ্চ চালাব না। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে লঞ্চ যাত্রায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সেরকম যাত্রীদের চাপ নেই। এখন চাইলেই কেবিন পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে নৌপথে আরো দূরবস্থা চলে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শুধু ফেরদৌসই নন, হতাশ দক্ষিণাঞ্চলের অন্য লঞ্চ মালিকরাও।

লাগাতার যাত্রী সংকটে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা। অঘোষিত রোটেশন প্রথা চালু করেও টেকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যবসা পাল্টে ফেলার কথা ভাবছেন অনেকে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি সুরভী লঞ্চের পরিচালক রেজিন-উল কবির বলেন, বিগত ১ বছর ধরে ‘প্রায় সব লঞ্চেই ৬০ শতাংশ কেবিন এবং ৫০ শতাংশ ডেক খালি থাকছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর লঞ্চের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। নতুন রেটে ডেকের ভাড়া জনপ্রতি ৪৫৭ টাকা হলেও আমরা নিচ্ছি ৪০০ টাকা বা তারও কম। এছাড়া সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার তুলনায় অনেক কম নিলেও মিলছে না যাত্রী। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘করোনায় সড়কপথের যানবাহন চললেও বছরজুড়ে বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ। তখনই ১২টা বেজে গেছে আমাদের। পরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি মিললেও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অনুমতি মেলেনি। এই ধাক্কা সামলে আমরা যখন টিকে থাকার লড়াই করছি, ঠিক তখনই এলো পদ্মা সেতু চালুর পর সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধাক্কা। মানুষ এখন কম সময়ের মধ্যেই ঢাকা কিংবা বরিশাল পৌঁছাতে পারছেন। অনেকেই সারারাত জেগে ঢাকা কিংবা বরিশাল আসতে চান না। ঈদে যাত্রী কিছুটা বাড়লেও তা সাময়িক। সত্যিকার অর্থে বরিশাল অঞ্চলে লঞ্চ ব্যবসা এখন হুমকির মুখে।