৬ মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ৩৮৯ জন শ্রমিক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কর্মক্ষেত্রে বিগত ৬ মাসে (১ জানুয়ারি-৩০ জুন) সারা দেশে ২৮৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে একই সময়ে সারা দেশে ২৪১টি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) এই জরিপ পরিচালনা করেছে। গতকাল সোমবার সেইফটি অ্যান্ড রাইটস তাদের জরিপ তথ্যটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। জরিপে প্রাপ্ত কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ১২৮ জন, নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছে ৮৬ জন। এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৮৫ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৫০ জন এবং কৃষি খাতে ৬২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন; বিস্ফোরণে ৫০ জন; বজ্রপাতে ৪০ জন; মাচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছে ৩২ জন; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩০ জন; শক্ত বা ভারি কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২২ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন; আগুনে পুড়ে আটজন; পানিতে ডুবে পাঁচজন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে চারজন এবং অন্যান্য কারণে আটজন। জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালক ইত্যাদি হলো গত ছয় মাসের পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এসআরএস দেখেছে ক্যামিকেল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, কারখানার ভবনে জরুরি বর্হিগমন পথ না থাকা, বহির্গমন পথ তালাবদ্ধ করে দেয়া, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেয়া, নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়া না করা। কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া, ভেজা হাতে মোটর চালু করা, মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড উঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখা গেছে।
তাছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। জরিপ তথ্য প্রকাশের সময় এসআরএস’র নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বিভিন্ন ছোট-বড় বিস্ফোরণের ঘটনাও এই ৬ মাসে পরিলক্ষিত হয়েছে। বজ্রপাতে কৃষি খাতের শ্রমিকদের মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে নির্মাণ খাতের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
পরিবহন, নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে মালিকদের অবহেলা এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর যথাযথ পরিদর্শনের ঘাটতি কর্মদুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কারখানা ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিরাপত্তা নির্দেশনা প্রণয়ন, ঝুঁকি নিরূপণসহ দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।